রুমা (বান্দরবান) প্রতিনিধিঃ
আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর থেকে প্রথমবারের মতো কেউ জায়গা করে নিয়েছেন টাইগার ক্রিকেটের মূল স্রোতে। হবিগঞ্জের পেসার অনিক ত্রিপুরা খেলছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে। পরিবারের অমতে ক্রিকেটে আসা অনিকই এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সম্প্রদায়কে। শুনিয়েছেন ক্রিকেটে আসার পথে তার প্রতিবন্ধকতার গল্প। তাকে নিয়ে উচ্ছ্বাস কোচ নাজমুল ইসলামেরও।
ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে অনূর্ধ্ব ১৯ দলে খেলছেন অনিক ত্রিপুরা।
হবিগঞ্জের বাহুবল থেকে হোম অব ক্রিকেট। অনিক ত্রিপুরা যাত্রাটা রোমাঞ্চকর ছিল। শুধু ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীই নয়, আদিবাসী থেকে প্রথমবারের মতো কোন ক্রিকেটার ক্রিকেটের মূল স্রোতে। কীর্তি যতটা বিরল, ঊনিশ না পেরুনো অনিক যেন ততটাই লাজুক।
অনিক মূলত একজন পেসার। ব্যাটিংটাও পারেন বেশ। ৬.৩ ফিট উচ্চতা তাকে দিয়েছে বাড়তি সুবিধা। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রাথমিক ক্যাম্পে থেকে দৃষ্টি রাখছেন সূদুর দিগন্তে। স্নায়ুচাপকে সঙ্গী করেই শুনিয়েছেন উঠে আসার গল্প।
অনিক বলেন, ‘আমাদের গ্রামে কোনো কারেন্ট ছিল না। বেশির ভাগ মানুষই ফুটবল খেলে। ক্রিকেট খেলার মতো মাঠ ছিলনা। ফুটবল মাঠে খেলেই আমি বড় হয়েছি। মাঠটা একদম ছোট।
ফুটবলের মাঠে ক্রিকেট খেলেও বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখা অনিকের জন্য পথটা সহজ ছিল না। পরিবার থেকে সমর্থন পাননি তিনি। ক্রিকেট খেলতে হতো বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে।অনিক বলেন, ‘আমার পরিবারের কেউ শুরুতে সমর্থন দিত না। তখন আমি পালিয়ে খেলতাম। আমাকে মানুষ বাসা থেকে খেলতে নিয়ে যেত। বাবা নিষেধ করতেন। খেলে কী করব, বলতেন। তবু আমি পালিয়ে খেলতাম। মারও খেতাম।’
সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট মানেই যেন পেসারদের স্বর্গরাজ্য। সিনিয়র ক্যাম্পেইনর এবাদতও অনিক সিলেটের শুনে নিজেই দিলেন হাত বাড়িয়ে। তাসকিন, ব্রেট লি, শোয়েব আখতারের পাঁড়ভক্ত অনিক আরও বলেন, ‘আমার স্বপ্ন, আমি একদিন বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলব। এখন যে মঞ্চটা পেয়েছি, মনে হচ্ছে সামনে এগোতে পারব।
জেলা পর্যায় থেকে অনূর্ধ্ব-১৬ তে ট্রায়াল। জায়গা হয়ে যায় বয়সভিত্তিক দলে। স্থানীয় কোচদের নজর কাড়ার পর এক সময় অনিকের ভিডিও চলে আসে জাতীয় দলের সাবেক পেসার ও বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের কোচ নাজমুল হোসেনের হাতে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
প্রথম দিকে সমর্থন পাননি যেই পরিবারের এখন তারাই অনিককে ঘিরে দেখে স্বপ্ন। হয়তো লাল সবুজের জার্সিতে আইডল তাসকিনের মতো অনিকও তুলবেন গতির ঝড়। সে স্বপ্ন মিছে কল্পনা নাকি ধরা দেবে বাস্তবে। সব ছাঁপিয়ে আদিবাসী অনেকের মনেই অনিক যে প্রত্যাশার বীজ পুঁতেছেন। শুনিয়েছেন ক্রিকেটার হওয়ার গল্প। বন্ধুর সে পথ মারিয়ে হয়তো এখান থেকেও উঠে আসবে আগামীর ক্রিকেটের তারকা।