মিকেল চাকমা, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙ্গামাটিঃ
পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে চাইলে শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে জানিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য ও জনসংহতি সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেছেন, আমরা আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব ও ভূমির অধিকার ফেরত চাই। তিনি বলেন, পাহাড়ের অশান্ত পরিস্থিতি দূর করতেই শান্তি চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু সেই চুক্তি এখনো পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না করায় পাহাড়ে এখনো বৈষম্য ও অশান্ত পরিবেশ পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের চুক্তি দেশ ও বাঙালির স্বার্থের বিরুদ্ধে নয়। আমরা বিচ্ছিন্ন নই, আমাদেরকে আমাদের মতো থাকতে দিন।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) সকালে রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহরের কুমার সুমিত রায় জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গণে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সাধারণ সম্পাদক সহ-সাধারণ সম্পাদক উ উইন মং জলির সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা, জনসংহতি সমিতির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক জুয়েল চাকমা, মহিলা সমিতির নেত্রী আশিকা চাকমা, জনসংহতি সমিতির নেতা অরুণ ত্রিপুরা।
গণসমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে ভূমি সমস্যা বেড়েই চলেছে। চুক্তি মোতাবেক গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর না হওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। তাই দ্রুত শান্তি চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলন জোরদার করতে নেতাকর্মীদের আহবান জানান তারা।
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের উদ্যোগে আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭তম বর্ষপুর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য ও জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি গৌতম কুমার চাকমা বলেছেন, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা চাই। কর্মকতা শাসিত পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবর্তে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি শাসিত পার্বত্য চট্টগ্রাম পেতে চাই। সেই লক্ষে আমরা কাজ করে চলেছি। কিছুদিন আগেও আঞ্চলিক পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা আইন উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও নৌ পরিবহণ উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছি। আঞ্চলিক পরিষদের মাননীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আমরা চেষ্টায় আছি পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের জীবন এবং সম্পত্তি যেন নিরাপদ থাকে। পাহাড়ি-বাঙালি যাতে নির্বিঘ্নে স্ব স্ব পেশায় কাজ করতে পারে সে চেষ্টায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা যখন আঞ্চলিক পরিষদে থাকি তখন সংবিধান মেনেই কাজ করি। আঞ্চলিক পরিষদের আইন ও বিধি-বিধান মেনে কাজ করি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য সাথোয়াই প্রু মারমা। সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার, আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য মাধবীলতা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণ চন্দ্র চাকমা, অবসরপ্রাপ্ত উপসচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য হাবিব আজম, হেডম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি থোয়াই অং মারমা, আইনজীবি ভবতোষ হেডম্যান, সাবেক ছাত্রনেতা তনয় দেওয়ান, উন্নয়ন কর্মী আব্বাস উদ্দিন প্রমুখ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নির্মল কান্তি চাকমা, আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদের সদস্য, কর্মকর্তা, শিক্ষক-সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।