Dhaka , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একটু থামুন ! পাহাড়ের শিক্ষা নিয়ে একটু ভাবুন !

print news

সংবাদ বিশ্লেষণ

 

সম্পাদকীয়ঃ

 

ফেইসবুকে পেইজে প্রকাশিত চাকমা ক্লিনটন এবং অশোক কুমার চাকমা আইডি থেকে নেওয়া তথ্যটি সত্যতা এবং গুরুত্বপূর্ণ মনে করে অনলাইন নিউজ সাইটে তুলে ধরা হলো। আজকে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বের হলো। সারা দেশের ফলাফল নিয়ে বলবো না। পাহাড়ের ফলাফল নিয়ে একটু বলছি।

 

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পাসের হার ৭০.৩২%। চট্টগ্রাম বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ১,০৬,২৯৮ জন। মোট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ১,০৫,৪১৬ জন। ছাত্রদের পাসের হার ৬৭.৭২% এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৭২.৪৯%। পার্বত্য জেলা গুলোর পাসের হার একটু দেখি। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় পাসের হার ৬০.৩২%, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় ৫৯.৬৩% এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ৫৯.৯০%। তিন পার্বত্য জেলায় গড় পাসের হার ৫৯.৯৫%। অর্থাৎ ৪০% শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করেছে।

 

ঘরের দুয়ারের সামনে ৩টি কলেজের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১,১২৭ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছে ৬৭৮ জন। এ হিসেবে পাসের হার ৬০.১৬%। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩৫ জন। রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজের মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৬৯৩ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছে ২৪৬ জন। এ হিসেবে পাসের হার ৩৫.৫০%। রাঙ্গামাটি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২২৬ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছে মাত্র ৭৬ জন। এ হিসেবে পাসের হার ৩৩.৬৩%। তিনটি কলেজের গড় পাসের হার মাত্র ৪৩%।

 

সুতরাং ভেবে দেখুন, ৫৭% শিক্ষার্থী এইচএসসিতে ফেল করছে! এটা হলো রাঙ্গামাটি শহরের চিত্র। মফস্বল কলেজ গুলোর অবস্থা কী? এত সংখ্যক শিক্ষার্থীর ফেল করার কারণ কী? ফেল করার পেছনে বহু কারণ আছে। এ সমস্যা গুলো এখানে বিশ্লেষণ করার সুযোগ নেই। তারপরেও দু’একটা কারণ উল্লেখ করে নোটটা শেষ করছি। শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি দীর্ঘ বছরের এবং ক্রমপুঞ্জীভূত ঘাটতি। সেই শিখন ঘাটতির প্রতিফলন হলো পরীক্ষায় ফেল। প্রাথমিক শিক্ষা বলতে গেলে প্রায় শেষ। অথচ প্রাথমিক শিক্ষা হলো শিক্ষার মূল ভিত্তি। সেই ভিত্তিটা এমনভাবে ধসে পড়েছে, এটাকে মেরামত করতে গেলে দীর্ঘ মেয়াদি উদ্যোগ, বিনিয়োগ ও নেতৃত্ব লাগবে। মাধ্যমিক শিক্ষা হলো উচ্চ শিক্ষায় যাওয়ার ভীত সুদৃঢ় করার প্রস্তুতি পর্ব।

 

পাহাড়ের ৯৭% মাধ্যমিক বিদ্যালয় বেসরকারি। কেবল সরকারি স্কুল নয়, প্রায় সব বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল গুলোতে নেই শিক্ষক, নেই অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা, নেই কোনো প্রণোদনা। শুধু নেই আর নেই। ‘নেই’– এর প্রবলতায় কীভাবে উচ্চ শিক্ষার ভীত সুদৃঢ়করণ হবে! মাধ্যমিক শিক্ষা ‘নেই-নেই’ অবস্থা নিয়ে কথা বলার মানুষও নেই। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার অবস্থা আরো করুণ। অথচ মাধ্যমিক শিক্ষাকে বলা হয় উচ্চ শিক্ষার ভিত্তি। এ স্তরেও শুধু “নেই আর নেই” – শিক্ষক নেই, বসার জায়গা নেই, ক্লাশ নেই (ক্লাশ হয় না), ব্যবহারিক ক্লাশের সুযোগ নেই, উপকরণ নেই, বই নেই।

 

এই ‘নেই’- এর প্রবলতায় শিক্ষার্থীরা ছুটটে বাধ্য হয় প্রাইভেট টিউটরের কাছে, কোচিং সেন্টারের কাছে। সবার তো ‘প্রাইভেট’ টিউটরের কাছে পড়ার টাকা নেই। ঐ ‘নেই-ওয়ালাদের কী হবে? ঐ নেই-ওয়ালাদেরও দেখার কেউ নেই। অসীম ‘নেই’-এর চূড়ান্ত ফলাফল হলো পাহাড়ে শিক্ষার অবস্থা ভালো নেই। এই যে ভালো নেই, সেটা ভালোভাবে দেখার মতো কেউ নেই, নেতৃত্বও নেই।

 

শুধু নেই আর নেই। এই নেই-এর মান হলো শুণ্য (০)। তবে শুন্যের সৌন্দর্য হলো অন্য সংখ্যার সাথে বসালে তার মান বাড়ে। এ অবস্থায় আমাদের এমন কাউকে খুঁজতে হবে – যিনি আমাদের পাহাড়ের শিক্ষার শুন্য নিয়ে খেলতে প্রস্তুত আছেন। তাঁকে আমরা কোথায় পাবো?

 

ছবি: ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহিত।

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Chtbarta

জনপ্রিয়

মানিকছড়ি সদর ইউনিয়নে কৃষক সমাবেশ

একটু থামুন ! পাহাড়ের শিক্ষা নিয়ে একটু ভাবুন !

প্রকাশিত: ০৬:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
print news

সংবাদ বিশ্লেষণ

 

সম্পাদকীয়ঃ

 

ফেইসবুকে পেইজে প্রকাশিত চাকমা ক্লিনটন এবং অশোক কুমার চাকমা আইডি থেকে নেওয়া তথ্যটি সত্যতা এবং গুরুত্বপূর্ণ মনে করে অনলাইন নিউজ সাইটে তুলে ধরা হলো। আজকে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বের হলো। সারা দেশের ফলাফল নিয়ে বলবো না। পাহাড়ের ফলাফল নিয়ে একটু বলছি।

 

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পাসের হার ৭০.৩২%। চট্টগ্রাম বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ১,০৬,২৯৮ জন। মোট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ১,০৫,৪১৬ জন। ছাত্রদের পাসের হার ৬৭.৭২% এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৭২.৪৯%। পার্বত্য জেলা গুলোর পাসের হার একটু দেখি। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় পাসের হার ৬০.৩২%, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় ৫৯.৬৩% এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ৫৯.৯০%। তিন পার্বত্য জেলায় গড় পাসের হার ৫৯.৯৫%। অর্থাৎ ৪০% শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করেছে।

 

ঘরের দুয়ারের সামনে ৩টি কলেজের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১,১২৭ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছে ৬৭৮ জন। এ হিসেবে পাসের হার ৬০.১৬%। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩৫ জন। রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজের মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৬৯৩ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছে ২৪৬ জন। এ হিসেবে পাসের হার ৩৫.৫০%। রাঙ্গামাটি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২২৬ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছে মাত্র ৭৬ জন। এ হিসেবে পাসের হার ৩৩.৬৩%। তিনটি কলেজের গড় পাসের হার মাত্র ৪৩%।

 

সুতরাং ভেবে দেখুন, ৫৭% শিক্ষার্থী এইচএসসিতে ফেল করছে! এটা হলো রাঙ্গামাটি শহরের চিত্র। মফস্বল কলেজ গুলোর অবস্থা কী? এত সংখ্যক শিক্ষার্থীর ফেল করার কারণ কী? ফেল করার পেছনে বহু কারণ আছে। এ সমস্যা গুলো এখানে বিশ্লেষণ করার সুযোগ নেই। তারপরেও দু’একটা কারণ উল্লেখ করে নোটটা শেষ করছি। শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি দীর্ঘ বছরের এবং ক্রমপুঞ্জীভূত ঘাটতি। সেই শিখন ঘাটতির প্রতিফলন হলো পরীক্ষায় ফেল। প্রাথমিক শিক্ষা বলতে গেলে প্রায় শেষ। অথচ প্রাথমিক শিক্ষা হলো শিক্ষার মূল ভিত্তি। সেই ভিত্তিটা এমনভাবে ধসে পড়েছে, এটাকে মেরামত করতে গেলে দীর্ঘ মেয়াদি উদ্যোগ, বিনিয়োগ ও নেতৃত্ব লাগবে। মাধ্যমিক শিক্ষা হলো উচ্চ শিক্ষায় যাওয়ার ভীত সুদৃঢ় করার প্রস্তুতি পর্ব।

 

পাহাড়ের ৯৭% মাধ্যমিক বিদ্যালয় বেসরকারি। কেবল সরকারি স্কুল নয়, প্রায় সব বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল গুলোতে নেই শিক্ষক, নেই অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা, নেই কোনো প্রণোদনা। শুধু নেই আর নেই। ‘নেই’– এর প্রবলতায় কীভাবে উচ্চ শিক্ষার ভীত সুদৃঢ়করণ হবে! মাধ্যমিক শিক্ষা ‘নেই-নেই’ অবস্থা নিয়ে কথা বলার মানুষও নেই। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার অবস্থা আরো করুণ। অথচ মাধ্যমিক শিক্ষাকে বলা হয় উচ্চ শিক্ষার ভিত্তি। এ স্তরেও শুধু “নেই আর নেই” – শিক্ষক নেই, বসার জায়গা নেই, ক্লাশ নেই (ক্লাশ হয় না), ব্যবহারিক ক্লাশের সুযোগ নেই, উপকরণ নেই, বই নেই।

 

এই ‘নেই’- এর প্রবলতায় শিক্ষার্থীরা ছুটটে বাধ্য হয় প্রাইভেট টিউটরের কাছে, কোচিং সেন্টারের কাছে। সবার তো ‘প্রাইভেট’ টিউটরের কাছে পড়ার টাকা নেই। ঐ ‘নেই-ওয়ালাদের কী হবে? ঐ নেই-ওয়ালাদেরও দেখার কেউ নেই। অসীম ‘নেই’-এর চূড়ান্ত ফলাফল হলো পাহাড়ে শিক্ষার অবস্থা ভালো নেই। এই যে ভালো নেই, সেটা ভালোভাবে দেখার মতো কেউ নেই, নেতৃত্বও নেই।

 

শুধু নেই আর নেই। এই নেই-এর মান হলো শুণ্য (০)। তবে শুন্যের সৌন্দর্য হলো অন্য সংখ্যার সাথে বসালে তার মান বাড়ে। এ অবস্থায় আমাদের এমন কাউকে খুঁজতে হবে – যিনি আমাদের পাহাড়ের শিক্ষার শুন্য নিয়ে খেলতে প্রস্তুত আছেন। তাঁকে আমরা কোথায় পাবো?

 

ছবি: ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহিত।