প্রি পেইড মিটারে ভূঁতরে বিলের প্রতিবাদে রাঙামাটি বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও
বিশেষ প্রতিবেদক, রাঙামাটিঃ
বিদ্যুৎ বিভাগের ভূঁতড়ে বিলে বিপাকে পড়েছে রাঙামাটির পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। এর প্রতিবাদে রবিবার (২৮ এপ্রিল) সকালে রাঙমাটির বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে ভুক্তভোগীরা। অন্যদিকে, বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল থাকলে তা সমাধান করা হবে।
সরকার ঘোষিত ডিজিটাল মিটার পরিবর্তন করে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করে বিদ্যুৎ বিভাগ। এতে প্রথম দফায় পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের ইসলামপুর, শরিয়তপুর, পুরানবস্তি এলাকায় ১ হাজার গ্রাহকের ঘরে স্থাপন করা হয় প্রিপেইড মিটার। নিয়মিত যে বাড়িতে ৫শ থেকে ১ হাজর টাকা বিল আসতো সেখানে হঠাৎ করে কাউকে ৫০ হাজার, কাউকে ৩০ হাজার টাকার গায়েবি বিল দেয়া হয়েছে। পুরানো মিটার অনুযায়ী মার্চের বিল বাবদ এ বিল দেয়া হয়। এতে অসহায় হয়ে পড়েছেন ভুক্তোভোগীরা। এমন ভুঁতড়ে বিলের প্রতিবাদে রবিবার সকালে শহরের ভেদভেদিস্থ বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে স্থানীয় শতাধিক ভুক্তভোগী।
এসময় তারা মনগড়া বিল করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়ী করেন। একই সাথে এ বিল পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করেন। পেশায় জেলে, মাঝী ও নিন্ম আয়ের মানুষ হওয়ায় এই বিল পরিশোধ করা সম্ভব নয় বলে জানান ভুক্তোভোগীরা।
ভুক্তভোগী সালেহ আক্তার জানান, আমার আগে বিল আসতো ৫-৭শত টাকা। এখন একসাথে বিল দিয়েছে ৩০ হাজার টাকা। এগুলো কোত্থেকে দিব। এই টাকা পেমেন্ট করার সামথ্য নাই বলে জানান তিনি।
বিদ্যুৎ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী জহির উদ্দীন জানায়, ফ্রি পেইড মিটার লাগানোর পর পুর্বের এনালক ডিজিটাল মিটারে যে বিল ছিল তা পরিশোধ করতে হবে। যদি পুর্বের বিল বকেয়া থাকে তাহলে ফ্রি পেইড মিটার অটো লক হয়ে যাবে। এই জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ দায়ী নয়।
রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, গ্রাহকরা লিখিত অভিযোগ দিলে বিল পর্যালোচনা সহ সংশোধনে সহায়তা করা হবে।
এদিকে, তীব্র তাপদাহে পুরো দেশজুড়ে মানুষের হাহাকার, আর্তনাদ ও গরমে চেচামেচি। এরমধ্যে গত ১০ দিন ধরে বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পুরো এলাকাজুড়ে ও অন্ধকারে রাতযাপন করছেন কয়েকশ পরিবারের গ্রামের লোকজন। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গ্যা ইউনিয়নের দেবতাছড়ি কিচিং পাড়া এলাকার অধিকাংশ গ্রামবাসীরা দিন মজুর ও চাষাবাদের উপর নির্ভরশীল। গত কিছুদিন ধরে সূর্যের তাপদাহে ক্ষেতে খাওয়া মানুষের আর্তনাদে শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
আজ রবিবার ২৮ এপ্রিল সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৮ এপ্রিল গভীর রাতে কে বা কারা দেবতাছড়ি কিচিং পাড়া এলাকার বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার ভেঙ্গে তামার কয়েল চুরি করেছে। কখন চুরি হয়েছে এলাকাবাসীরা কেউ টের বা জানতে পারেনি। তবে ধারনা করা হচ্ছে মধ্য রাতেই এই চুরির ঘটনাটি ঘটেছে। ট্রান্সফরমারটি যে রাতে চুরি হয়েছে ঐদিন থেকে পুরো এলাকাজুড়ে বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে সন্ধ্যার পর অন্ধকারে রাত্রিযাপন করছেন। আবার অনেকে রাতেই প্রচন্ড গরমে বাড়ির বাহিরে রাতযাপনের কথা জানান।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা কাউখালী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের ব্যাপারে অভিযোগ করে বলেন, গত ১৮ এপ্রিল মধ্যরাতে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারটি চুরি হওয়ার পরের দিন কাউখালী বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী ওয়াহিদ ইমতিয়াজ শীতলকে মৌখিক ভাবে অবহিত করেন। কিন্তু গত ১০দিন অতিক্রান্ত হলেও তিনি কোন সুদোত্তর বা অভিযোগটি আমলে নেয়নি। একারনে আজও এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ও ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয়নি। এই ব্যাপারে অনবিলম্বে দেবতাছড়ি কিচিং পাড়া এলাকায় নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর নিকট সুদৃষ্টির জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।
এব্যাপারে কাউখালীর দেবতাছড়ি কিচিং পাড়ায় ট্রান্সফরমার চুরি খবর ও স্থানীয়দের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১০ দিন ধরে বিদ্যুৎ বিহীন ব্যাপারে কাউখালী বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী ওয়াহিদ ইমতিয়াজ শীতলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চুরির অভিযোগ জানতে পেরেছি এবং যতদ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যায় সে ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট যোগাযোগ করা হচ্ছে।
এলাকায় ১০ দিন যাবৎ বিদ্যুৎ সংযোগ কেন দেয়া হয়নি এক প্রশ্নের উত্তরে আবাসিক প্রকৌশলী ওয়াহিদ ইমতিাজ শীতল বলেন, রাঙামাটির কেন্দ্রীয় ষ্টোরহাউজে পর্যাপ্ত কেভিএ ট্রান্সফরমার স্টকে না থাকায় সংযোগ দেয়া যায়নি। তবে ২/৩ দিনের ভিতর নতুন ট্রন্সফরমার সংগ্রহ করে অতিসত্ত্বর বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে বলে জানান আবাসিক প্রকৌশলী ওযাহিদ ইমতিয়াজ শীতল। এমনকি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ না করতে প্রতিবেদককে মুঠোফোনে আকুতি জানান আবাসিক প্রকৌশলী ওযাহিদ ইমতিয়াজ শীতল।
এদিকে, গত ১০ দিন ধরে দেবতাছড়ি কিচিং পাড়ায় বিদ্যুৎ বিহীন ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় এলাকার গ্রামবাসীদের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি ট্রান্সফরমার নষ্ট হলে কাউখালী আবাসিক প্রকৌশলী ওয়াহিদ ইমতিয়াজ শীতল আজ নয় কাল এভাবে বলে বলে ট্রান্সফার বসানোর সময়ক্ষেপনের কথা প্রতিশ্রুতি দেয়ার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দেবতাছড়ির কিচিং পাড়া এলাকায় কবে, কখন নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হবে এলাকাবাসীরা আশংকা করছেন। তাছাড়া দীর্ঘ ১০ দিন অতিক্রান্ত হওয়াতেই সংযোগ না দেয়ায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দেবতাছড়ি কিচিং পাড়ায় এখনো পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিহীনে তীব্র তাপদাহে রাত্রিযাপনে বেগ পেতে হচ্ছে এলাকাবাসীদের।
ছবিঃ ট্রান্সফরমার থেকে তামার কয়েল চুরি এবং ভুঁতরে বিলের দাবিতে বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও
মন্তব্য করুন