সুজন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, বিলাইছড়ি প্রতিনিধিঃ
কার্পজাতীয় মাছের বংশবিস্তারের লক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ। নিষেধাজ্ঞা শেষে ২৪ জুলাই হ্রদে নামার কথা ছিল জেলেদের। তবে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ৮ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে হ্রদে নামতে পারেননি মৎস্যজীবীরা। জাল ও নৌকা পড়ে আছে ঘাটে। তবে নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলেরা।
ফিশারি ঘাট, রাঙামাটির সবচেয়ে বড় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। বছরের এ সময়ে মাছ ভর্তি বোটের ভিড়ে কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে এই ঘাট। তবে এবার নেই সেই চিরচেনা রূপ। জেলে, ব্যবসায়ী আর শ্রমিকের হাঁকডাকে মুখর হওয়ার বদলে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। কার্পজাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন এবং অবমুক্ত করা পোনার স্বাভাবিক বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এ বছর তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে ২৪ জুলাই হ্রদে নামার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন জেলেরা। এর আগে চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রশাসন। তবে কষ্ট বাড়লেও নিষেধাজ্ঞার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলেরা।
রাঙামাটি শহরের পুরাতন জেলে পাড়ার বাসিন্দা বসু দাস ও কালাবাসি জলদাস বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে পানি আছে তাতে মাছ শিকার শুরু হলে প্রথম কয়েক মাস প্রচুর মাছ জালে ধরা পড়বে। কিন্তু এতে আগামী শীতে হ্রদে আর মাছ পাওয়া যাবে না। মাছ শিকার বন্ধ থাকাকালে এই সময়ে আমাদের কষ্টে দিন কাটে। তবুও আমরা চাই, পানি না বাড়া পর্যন্ত আরও কিছুদিন বন্ধ থাক।’
মৎস্য ব্যবসায়ী উদয়ন বড়ুয়া জানান, পর্যাপ্ত পানি না থাকায় গতবছরও কয়েক দফা নিষেধাজ্ঞা বাড়ায় প্রশাসন। এতে সুফল পেয়েছেন মৎস্যজীবী, ব্যবসায়ী ও বিএফডিসি। বিএফডিসি গত অর্থ বছরে প্রায় ১৬ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে। যা রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড বা যায়। এর মূল কারন হ্রদে পর্যাপ্ত পানি ছিলো এবং মাছ বড় হওয়াও সুযোগ পেয়েছিলো।
রাঙামাটির বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন-বিএফডিসির ব্যবস্থাপক, কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, সবদিক বিবেচনা করে মাছ ধরায় নতুন বিধিনিষেধ বাড়ানো হয়েছে। আগামী আগস্ট মাসের ৮ তারিখ হ্রদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা রয়েছে। সেখানেই নতুন সিদ্ধান্ত হবে, কবে খুলবে কাপ্তাই হ্রদ। আশা করছি, এর মধ্যে হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাবে।’ সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্তে হ্রদে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বর্ধিত সময়েও জেলেরা খাদ্য সহায়তা পাবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘২৪ জুলাই হ্রদে মাছ শিকার শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ২২ জুলাই সভায় সবার মতামতের ভিত্তিতে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৮ আগস্ট পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকার করে জীবিকা চালায় ২৫ হাজার জেলে।