বিশেষ প্রতিনিধি, খাগড়াছড়িঃ
জামিনপ্রাপ্তদের জেল গেইট থেকে পুনঃ গ্রেফতার বন্ধ কর, আনন্দ প্রকাশ চাকমা ও কুনেন্ট চাকমাসহ জেলে বন্দী ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী- সমর্থকদের নিঃশর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা-হুলিয়া প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও তার সহযোগী সংগঠন।
শনিবার (৩১ আগষ্ট) ২০২৪ সকাল ১১ টায় এই সমাবেশ পূজগাং বাজারে অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শুরু হওয়ার আগে পানছড়ির বিভিন্ন এলাকা থেকে সারিবালা কলেজের সামনে হাজার নারী-পুরুষ জড়ো হয়। মিছিলটি চেঙ্গী সারিবালা কলেজ থেকে শুরু হয়ে উপর পূজগাং বাজার হয়ে নিচের পূজগাং বাজার ঘুরে আবার উপর পূজগাং ব্রীজে এসে মিলিত হয়ে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
মিছিল পরবর্তী সমাবেশে ইউপিডিএফ সদস্য সুরমঙ্গল চাকমার সঞ্চালনায় ইউপিডিএফ সংগঠক বকুল চাকমার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাবেক পিসিপি নেতা মিঠন চাকমা সহ আরও বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পরীনিতা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বরুন চাকমা, পিসিপি পানছড়ি সভাপতি সুনীল ময় চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম পানছড়ি সভাপতি রিপন চাকমা।
ইউপিডিএফ সংগঠক বকুল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যে সমস্ত ষড়যন্ত্র হয়েছে তার একমাত্র দায়ী কতিপয় সেনা কর্মকর্তা। এযাবৎকালের পাহাড়ে দজনের অধিক গণহত্যা হয়েছে, ধর্ষনের ঘটন ঘটেছে, ভুমি বেদখল হয়েছে তার বিচার আমরা এখনো পাইনি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে আন্দোলন, সংগ্রাম, লড়াই করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। যুব নেতা বরুন চাকমা বলেন, জুম্ম ধ্বংস করার সরকার সেনাবাহিনীর যে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ইউপিডিএফ শুরু থেকে সোচ্চার ছিল। বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে ইউপিডিএফ সবচেয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। ১৬ বছর যাবৎ ইউপিডিএফের ওপর দমন পীড়ন চালিয়ে ছিল। দেশের কোন জেলায় উপজেলায় জামিন প্রাপ্তদের জেল গেইট থেকে পুনঃবার গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেনি কিন্তুু পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটায় ঘটছে। আটককৃত ২৯ জন ইউপিডিএফ সদস্যদের জামিনপ্রাপ্ত আনেককে জেল গেট থেকে সেনা ডিজিএফআই আটক করেছে।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে যতদিন সেনাশাসন থাকবে ততোদিন পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরবেনা জুম্মজনতা মুক্তি হতে পারবেনা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তিনি ইউপিডিএফ অন্যতম নেতা আনন্দ প্রকাশ চাকমা পিসিপি নেতা কুনেন্টু চাকমা সহ জেলবন্দী-রাজবন্দী সকলের নিঃশর্ত মুক্তি এবং পাহাড় থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহরের দাবি জানান।
সাবেক পিসিপি নেতা মিঠন চাকমা বলেন, দেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলেও দেশে অন্যায় ভাবে আটককৃতদের মুক্তির কথা বললেও পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফ সদস্যদের মুক্তি দেয়নি। এখনো দেশে দুই শাসন জারি রয়েছে। পাহাড়ে এখনো জাতিগত বৈষম্য রয়ে গেছে। তিনি আটককৃত ইউপিডিএফ সদস্য সহ দেশে রাজবন্দীদের মুক্তির দাবি জানান।
পরীনিতা চাকমা বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে পাহাড়ি নারী ধর্ষনের বিচার করেনি। আজকে আমাদেরকে সকলে মিলে ধর্ষনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে।
ছাত্রনেতা সুনীলময় চাকমা বলেন, গত ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্ররা গ্রাফিটি অংকন করেছে এবং সমতলে গ্রাফিটি অংকনে কোন বাধা দেয়নি কিন্তুু পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী বাধা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করেছিলাম পাহাড়ে শান্তি আসবে, আমরা বুঝতে পারছিনা বিগত সরকারে ফ্যাসিস্ট নীতি এখনো চলমান রয়েছে কিনা। তিনি বিগত সরকারের আমলে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার আহব্বান জানান।
যুব ফোরাম পানছড়ি সভাপতি রিপন ত্রিপুরা বলেন, দেশের জনগন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর মুক্ত হলেও পাহাড়ি জনগণ এখনো মুক্ত হতে পারেনি। এখনো সেনাসাশন জারি রয়েছে। তিনি পাহাড় থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহারের দাবি জানান।