Dhaka , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানিকছড়িতে পাহাড়ে হলুদ চাষে ঝুঁকছেন চাষীরা

print news

 

অংগ্য মার্মা, মানিকছড়িঃ

খাগড়াছড়ি মানিকছড়ি পাহাড়ের মাটিতে হলুদ চাষের বেশ উপযোগী জায়গায়। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা হলুদ চাষের জন্য বিখ্যাত। এটি একটি মসলা জাতীয় খাদ্য হিসেবে পাহাড় ও সমতলে মানুষের কাছের বেশ জনপ্রিয়। সকল রান্না করা তরকারি খাবার তৈরিতে এই হলুদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া হলুদের চাহিদা বেশী ও এই বছর বাজারদর ভালো হওয়ায় খাগড়াছড়ি মানিকছড়ি উপজেলায় কৃষকরা হলুদ চাষে আগ্রহী হয়েছে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় মানিকছড়িতে বিপুল পরিমাণে চাষ হচ্ছে হলুদ।

মানিকছড়ি উপজেলা গঞ্জপাড়া, উত্তর হাফছড়ি, বাটনাতলী, গচ্ছাবিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টিলায় কোলজুড়ে একের পর এক হলুদের ক্ষেত। পাশাপাশি সবুজ পাহাড়ের কোলঘেঁষে এসব হলুদ চাষ নজর কাঁড়ছে সবার।

স্থানীয় হলুদ চাষী যোগ্যাছোলা বাসিন্দা রিপ্রু মারমা জানান, হলুদ চাষ সাধারণত ৯ মাসব্যাপী হয়ে থাকে আর বিঘা প্রতি কাঁচা হলুদ পাওয়া যায় প্রায় ১২০ থেকে ১২৫ মণ। তবে আগে হলুদে রোগবালাই নেই বলেও চলে। কিন্তু বর্তমানে এক ধরনের লীপব্লুজ, কন্ডপচা রোগ হওয়ার পরিচর্যা বেশী করতে হয় বলে জানান। বাজারদর বেশি হওয়ায় হলুদের আবাদে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা। স্থানীয় বাজারে পাটনাইয়া কাঁচা হলুদ প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১১শত বিক্রি হয় বলে জানান।

দীর্ঘ বছর ধরে হলুদের চাষ করে আসছেন স্থানীয় আরেকজন মো: আজিম (৪০)। তিনি হলুদ চাষের বিষয়ে জানান, ১৩ বছর যাবৎ কচু, আদা চাষ করে স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে সংসার চালাতেন তিনি। তবে একবার কৃষি অফিসের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি হলুদ চাষ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। হলুদ চাষে অর্থ বিনিয়োগ কম করলে হয়। পরে তিনি হলুদ চাষ করেই বেশ লাভবান হয়েছেন বলে জানান। তিনি হলুদ চাষের পাশাপাশি স্থানীয় এলাকায় ও মানিকছড়ি, গুইমারা, রামগড় বাজার থেকে খুচরা কাঁচা হলুদ ক্রয় করে গরম পানিতে সিদ্ধ ও প্রক্রিয়া করে হলুদ বিক্রি করে থাকেন। এ ছাড়া পাহাড়ে হলুদের চাষ সবচেয়ে বেশি ভালো হয় বলে তিনি জানান। এই বছর বাজারে শুঁকনো হলুদ প্রতি মণ ৬ হাজার ৫’শত থেকে ৭ হাজার টাকা দরে বিক্রি হবে বলে আশা করছেন চাষীরা।

received 962929685408417

এ বিষয়ে মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার কার্যালয় কৃষি অফিসার মো: কামরুল হাসান জানান, দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় পার্বত্য অঞ্চল খাগড়াছড়ি মানিকছড়িতে চাষ করা হলুদের কদর অনেকটা বেশি থাকে। কারন মানিকছড়ি উপজেলার সাথে চট্টগ্রাম শহর পাশাশাশি জালিয়াপাড়া হয়ে কুমিল্লা, ফেনী শহরে যোগাযোগ বেশ ভাল। আর বিশেষ করে মানিকছড়ি যেই জাতের হলুদের চাষ হয়, এটি অনেকটা ভালো মানের। তাই এর বিক্রিও বেশি হয়ে থাকে। এ ছাড়া তিনি জানান, মানিকছড়ি উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ব্লক ভিত্তিক প্রায় ৩১০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় পাটনাইয়া জাতও খাগড়ছড়ি কৃষি গবেষনায় ইনষ্টিটিউট হতে সরবরাহকৃত হলুদ বীজ বারি-১, বারি-২ জাতের হলুদের চাষ হয়ে থাকে জানান। এর মধ্যে যোগ্যাছোলা ইউনিয়নে ব্লকে বেশি হলুদের চাষ হয়ে থাকে। এ ছাড়া মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে স্থানীয় চাষিদের হলুদ চাষে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা মূলক উঠান বৈঠক করা হয়। বিশেষ করে সার প্রয়োগ কিংবা পোকামাকড় দমনে কী কী করা প্রয়োজন, সেই বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয় উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে। এ ছাড়া পাহাড়ের অধিকাংশ কৃষক কুমিল্লা কচু চাষের সঙ্গে ফসল হিসেবে হলুদের চাষ করে থাকেন, এতে তারা সঠিক পরিচর্যা করার সুযোগ পান। পাশাপাশি হলুদ সংরক্ষণ করে রাখা যায় বলে প্রান্তিক কৃষকরা হলুদ চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন।

 

লেখক তথ্য সম্পর্কে

Chtbarta

জনপ্রিয়

গোবিন্দগঞ্জে বালুর নীচে চাপা পড়ে একজনের মৃত্যু

মানিকছড়িতে পাহাড়ে হলুদ চাষে ঝুঁকছেন চাষীরা

প্রকাশিত: ১০:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
print news

 

অংগ্য মার্মা, মানিকছড়িঃ

খাগড়াছড়ি মানিকছড়ি পাহাড়ের মাটিতে হলুদ চাষের বেশ উপযোগী জায়গায়। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা হলুদ চাষের জন্য বিখ্যাত। এটি একটি মসলা জাতীয় খাদ্য হিসেবে পাহাড় ও সমতলে মানুষের কাছের বেশ জনপ্রিয়। সকল রান্না করা তরকারি খাবার তৈরিতে এই হলুদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া হলুদের চাহিদা বেশী ও এই বছর বাজারদর ভালো হওয়ায় খাগড়াছড়ি মানিকছড়ি উপজেলায় কৃষকরা হলুদ চাষে আগ্রহী হয়েছে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় মানিকছড়িতে বিপুল পরিমাণে চাষ হচ্ছে হলুদ।

মানিকছড়ি উপজেলা গঞ্জপাড়া, উত্তর হাফছড়ি, বাটনাতলী, গচ্ছাবিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টিলায় কোলজুড়ে একের পর এক হলুদের ক্ষেত। পাশাপাশি সবুজ পাহাড়ের কোলঘেঁষে এসব হলুদ চাষ নজর কাঁড়ছে সবার।

স্থানীয় হলুদ চাষী যোগ্যাছোলা বাসিন্দা রিপ্রু মারমা জানান, হলুদ চাষ সাধারণত ৯ মাসব্যাপী হয়ে থাকে আর বিঘা প্রতি কাঁচা হলুদ পাওয়া যায় প্রায় ১২০ থেকে ১২৫ মণ। তবে আগে হলুদে রোগবালাই নেই বলেও চলে। কিন্তু বর্তমানে এক ধরনের লীপব্লুজ, কন্ডপচা রোগ হওয়ার পরিচর্যা বেশী করতে হয় বলে জানান। বাজারদর বেশি হওয়ায় হলুদের আবাদে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা। স্থানীয় বাজারে পাটনাইয়া কাঁচা হলুদ প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১১শত বিক্রি হয় বলে জানান।

দীর্ঘ বছর ধরে হলুদের চাষ করে আসছেন স্থানীয় আরেকজন মো: আজিম (৪০)। তিনি হলুদ চাষের বিষয়ে জানান, ১৩ বছর যাবৎ কচু, আদা চাষ করে স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে সংসার চালাতেন তিনি। তবে একবার কৃষি অফিসের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি হলুদ চাষ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। হলুদ চাষে অর্থ বিনিয়োগ কম করলে হয়। পরে তিনি হলুদ চাষ করেই বেশ লাভবান হয়েছেন বলে জানান। তিনি হলুদ চাষের পাশাপাশি স্থানীয় এলাকায় ও মানিকছড়ি, গুইমারা, রামগড় বাজার থেকে খুচরা কাঁচা হলুদ ক্রয় করে গরম পানিতে সিদ্ধ ও প্রক্রিয়া করে হলুদ বিক্রি করে থাকেন। এ ছাড়া পাহাড়ে হলুদের চাষ সবচেয়ে বেশি ভালো হয় বলে তিনি জানান। এই বছর বাজারে শুঁকনো হলুদ প্রতি মণ ৬ হাজার ৫’শত থেকে ৭ হাজার টাকা দরে বিক্রি হবে বলে আশা করছেন চাষীরা।

received 962929685408417

এ বিষয়ে মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার কার্যালয় কৃষি অফিসার মো: কামরুল হাসান জানান, দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় পার্বত্য অঞ্চল খাগড়াছড়ি মানিকছড়িতে চাষ করা হলুদের কদর অনেকটা বেশি থাকে। কারন মানিকছড়ি উপজেলার সাথে চট্টগ্রাম শহর পাশাশাশি জালিয়াপাড়া হয়ে কুমিল্লা, ফেনী শহরে যোগাযোগ বেশ ভাল। আর বিশেষ করে মানিকছড়ি যেই জাতের হলুদের চাষ হয়, এটি অনেকটা ভালো মানের। তাই এর বিক্রিও বেশি হয়ে থাকে। এ ছাড়া তিনি জানান, মানিকছড়ি উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ব্লক ভিত্তিক প্রায় ৩১০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় পাটনাইয়া জাতও খাগড়ছড়ি কৃষি গবেষনায় ইনষ্টিটিউট হতে সরবরাহকৃত হলুদ বীজ বারি-১, বারি-২ জাতের হলুদের চাষ হয়ে থাকে জানান। এর মধ্যে যোগ্যাছোলা ইউনিয়নে ব্লকে বেশি হলুদের চাষ হয়ে থাকে। এ ছাড়া মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে স্থানীয় চাষিদের হলুদ চাষে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা মূলক উঠান বৈঠক করা হয়। বিশেষ করে সার প্রয়োগ কিংবা পোকামাকড় দমনে কী কী করা প্রয়োজন, সেই বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয় উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে। এ ছাড়া পাহাড়ের অধিকাংশ কৃষক কুমিল্লা কচু চাষের সঙ্গে ফসল হিসেবে হলুদের চাষ করে থাকেন, এতে তারা সঠিক পরিচর্যা করার সুযোগ পান। পাশাপাশি হলুদ সংরক্ষণ করে রাখা যায় বলে প্রান্তিক কৃষকরা হলুদ চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন।