Dhaka , শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে পাহাড়ে ৩ দিন ব্যাপী বিষুর উৎসব শুরু করলো পাহাড়িরা

  • প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: ১০:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০২৪
  • ২২৫ বার পড়া হয়েছে
print news

 

সুজন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, বিলাইছড়িঃ

 

রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধিঃ-পাহাড়ে পাহাড়িরা কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানো মধ্যে দিয়ে বিষুর উৎসব পালন বা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।তাই পার্বত্যবাসী ফুল ভাসানো মধ্যে দিয়ে দিবসটি সূচনা করলো। বুধবার (১২ এপ্রিল) শুক্রবার সকালে রাঙ্গামাটি জেলায় বিলাইছড়ি উপজেলাসহ সবকটি উপজেলায় বিভিন্ন পাহাড়ি গ্রামে নিজ নিজ পোশাক পরে ফুল ভাসিয়েছেন বলে জানা গেছে। এতে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সীদের লক্ষ্য করা গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে শিশু ও যুবক – যুবতী।

 

 

বিষু হলো তঞ্চঙ্গ্যা ভাষা। সমার্থক শব্দঃ-বৈসু,সাংগ্রাই, বিজু বা বিঝু,বিহু, বিয়ো, সাংক্রান,চাংক্রান, সাংরাই,সাংরান ইত্যাদি। যার অর্থ আনন্দ, অন্যভাবে বলতে গেলে পুরান বছরকে বিদায়, নতুন বছরকে স্বাগত জানানো, আর একটু বলতে গেলে অতীতে দুংখ বা গ্লানি মুছে ফেলে আগামী দিনের পথচলাকে আরো সুগম করা। চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় বিষু বা বিজু বা বিঝু উৎসবকে তিনভাগে ভাগ করে পালন করে থাকে।তবে অন্য সব সম্প্রদায়ের তেমন ব্যতিক্রম নয়। বছরের শেষ অর্থাৎ চৈত্র মাসের ২৯ তারিখে ‘ফুল বিষু, ৩০ তারিখে ‘মূল বিজু’ এবং নববর্ষের প্রথম দিনকে ‘গজ্যাপজ্যা বিষু’ নামে রকমারি উৎসব পালন করে।

received 340964045630074

‘ফুল বিষু’র দিন ভোররাতে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে নানা রকমের ফুলের সন্ধানে শিশু-কিশোরের দল সবুজ পাহাড়ি গহিন অরণ্যে বিচরণ শুরু করে দেয়। ফুল সংগ্রহ শেষে এরা বাড়িতে ফিরে এসে ফুলগুলোকে চারভাগে ভাগ করে একভাগ দিয়ে নিজের মনের মতো করে ঘরবাড়ি সাজায়। দ্বিতীয় ভাগ ফুল নিয়ে বৌদ্ধ বিহারে যায়। বুদ্ধের উদ্দেশ্যে ফুল উৎসর্গ করে সমবেত প্রার্থনায় রত হয়। পঞ্চশীলে সকলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ভিক্ষু সংঘ কর্তৃক দেয় ধর্মীয় নির্দেশনা শ্রবণ করে। তৃতীয় ভাগ গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ছড়া, নদী বা পুকুরের পাড়ে পূজা মন্ডপ তৈরি করে সেখানে প্রার্থনা করে যেন সারা বছর পানির মতো অর্থাৎ পানি যেমন শান্তশিষ্ট, ধীরে প্রবহমান সে ধরনের জীবনযাপন সকলে যেন করতে পারে। চতুর্থ ভাগ ফুল তারা প্রিয়জনকে ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ উপহার দেয় এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

 

‘মূল বিষু হচ্ছে বিষু’র প্রথম দিন। ফুল বিষু’র দিনে মূল বিষু’র প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। এদিনে ঘরের মহিলারা খুবই ব্যস্ত থাকে। ত্রিশ-চল্লিশ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারও অধিক কাঁচা তরকারির সংমিশ্রণে পাঁচন বা ঘণ্ড তৈরি করা হয়। পাঁচন ছাড়াও নানা ধরনের পিঠা, পায়েস, মাছ-মাংসের আয়োজনও থাকে। বছরের ঐতিহ্য হিসেবে থাকে বিন্নি ধানের খই, নাড়ু, সেমাইয়ের পাশাপাশি পাহাড়ি মদও পরিবেশন করা হয় আগত মেহমানদের। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাসহ সকলে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ায় এবং নানা আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িঘরের দরজায়, উঠানে, গো-শালায় প্রদীপ জ্বালিয়ে সকলের মঙ্গল কামনা করা হয়।

received 1066804597724534

‘গজ্যাপজ্যা বিষু পালিত হয় নববর্ষের প্রথম দিনে। চাকমারা এদিন বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে বিশ্রাম করে দিন অতিবাহিত করে। ছোটরা বড়দের নমস্কার করে এবং স্নান করিয়ে দিয়ে আশীর্বাদ প্রার্থনা করে। সন্ধ্যায় সকলে স্থানীয় বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে ধর্ম অনুশীলনে মশগুল থাকে। ভিক্ষুসংঘ কর্তৃক ধর্মদেশনা শুনে অনাগত দিন সুখেশান্তিতে কাটানোর জন্য বিশেষ প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করে। এভাবে গজ্যাপজ্যা দিনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

received 458944740037810

‘বৈসাবি’ উৎসব পালনে পাহাড়ির এবার একটু ব্যতিক্রমী হয়েছে। পার্বত্য-চট্টগ্রামে স্থিতিশীল পরিবেশ হলে কিছু কিছু চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামে রাত ভর ঘিলা খেলা এবং চারণ কবিদের (গেংগুলীদের) দিয়ে পালা গানেরও আয়োজন করা হয়েছে। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ও তাদের গ্রামে আয়োজন করেছে ঐতিহ্যবাহী গড়াইয়া নৃত্যের এবং মার্মারা সাংগ্রাই উৎসব করে।‘পহেলা বৈশাখ’ এবং পাহাড়ের ‘বৈসু’,‘সাংগ্রাই’ ও ‘বিষু’ উৎসব পালন সবার জন্য আনন্দমুখর হোক। দেশের জনগণের সুখ শান্তি এবং দেশের সমৃদ্ধি কামনায় নতুন যাত্রার মধ্যে দিয়ে আগমন ঘটুক নতুন বছরের এটা সবার কামনা।

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Chtbarta

জনপ্রিয়

বাবার সাথে ঘুরতে গিয়ে ঝরে গেল নিষ্পাপ শিশুর প্রাণ

নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে পাহাড়ে ৩ দিন ব্যাপী বিষুর উৎসব শুরু করলো পাহাড়িরা

প্রকাশিত: ১০:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০২৪
print news

 

সুজন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, বিলাইছড়িঃ

 

রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধিঃ-পাহাড়ে পাহাড়িরা কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানো মধ্যে দিয়ে বিষুর উৎসব পালন বা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।তাই পার্বত্যবাসী ফুল ভাসানো মধ্যে দিয়ে দিবসটি সূচনা করলো। বুধবার (১২ এপ্রিল) শুক্রবার সকালে রাঙ্গামাটি জেলায় বিলাইছড়ি উপজেলাসহ সবকটি উপজেলায় বিভিন্ন পাহাড়ি গ্রামে নিজ নিজ পোশাক পরে ফুল ভাসিয়েছেন বলে জানা গেছে। এতে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সীদের লক্ষ্য করা গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে শিশু ও যুবক – যুবতী।

 

 

বিষু হলো তঞ্চঙ্গ্যা ভাষা। সমার্থক শব্দঃ-বৈসু,সাংগ্রাই, বিজু বা বিঝু,বিহু, বিয়ো, সাংক্রান,চাংক্রান, সাংরাই,সাংরান ইত্যাদি। যার অর্থ আনন্দ, অন্যভাবে বলতে গেলে পুরান বছরকে বিদায়, নতুন বছরকে স্বাগত জানানো, আর একটু বলতে গেলে অতীতে দুংখ বা গ্লানি মুছে ফেলে আগামী দিনের পথচলাকে আরো সুগম করা। চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় বিষু বা বিজু বা বিঝু উৎসবকে তিনভাগে ভাগ করে পালন করে থাকে।তবে অন্য সব সম্প্রদায়ের তেমন ব্যতিক্রম নয়। বছরের শেষ অর্থাৎ চৈত্র মাসের ২৯ তারিখে ‘ফুল বিষু, ৩০ তারিখে ‘মূল বিজু’ এবং নববর্ষের প্রথম দিনকে ‘গজ্যাপজ্যা বিষু’ নামে রকমারি উৎসব পালন করে।

received 340964045630074

‘ফুল বিষু’র দিন ভোররাতে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে নানা রকমের ফুলের সন্ধানে শিশু-কিশোরের দল সবুজ পাহাড়ি গহিন অরণ্যে বিচরণ শুরু করে দেয়। ফুল সংগ্রহ শেষে এরা বাড়িতে ফিরে এসে ফুলগুলোকে চারভাগে ভাগ করে একভাগ দিয়ে নিজের মনের মতো করে ঘরবাড়ি সাজায়। দ্বিতীয় ভাগ ফুল নিয়ে বৌদ্ধ বিহারে যায়। বুদ্ধের উদ্দেশ্যে ফুল উৎসর্গ করে সমবেত প্রার্থনায় রত হয়। পঞ্চশীলে সকলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ভিক্ষু সংঘ কর্তৃক দেয় ধর্মীয় নির্দেশনা শ্রবণ করে। তৃতীয় ভাগ গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ছড়া, নদী বা পুকুরের পাড়ে পূজা মন্ডপ তৈরি করে সেখানে প্রার্থনা করে যেন সারা বছর পানির মতো অর্থাৎ পানি যেমন শান্তশিষ্ট, ধীরে প্রবহমান সে ধরনের জীবনযাপন সকলে যেন করতে পারে। চতুর্থ ভাগ ফুল তারা প্রিয়জনকে ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ উপহার দেয় এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

 

‘মূল বিষু হচ্ছে বিষু’র প্রথম দিন। ফুল বিষু’র দিনে মূল বিষু’র প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। এদিনে ঘরের মহিলারা খুবই ব্যস্ত থাকে। ত্রিশ-চল্লিশ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারও অধিক কাঁচা তরকারির সংমিশ্রণে পাঁচন বা ঘণ্ড তৈরি করা হয়। পাঁচন ছাড়াও নানা ধরনের পিঠা, পায়েস, মাছ-মাংসের আয়োজনও থাকে। বছরের ঐতিহ্য হিসেবে থাকে বিন্নি ধানের খই, নাড়ু, সেমাইয়ের পাশাপাশি পাহাড়ি মদও পরিবেশন করা হয় আগত মেহমানদের। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাসহ সকলে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ায় এবং নানা আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িঘরের দরজায়, উঠানে, গো-শালায় প্রদীপ জ্বালিয়ে সকলের মঙ্গল কামনা করা হয়।

received 1066804597724534

‘গজ্যাপজ্যা বিষু পালিত হয় নববর্ষের প্রথম দিনে। চাকমারা এদিন বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে বিশ্রাম করে দিন অতিবাহিত করে। ছোটরা বড়দের নমস্কার করে এবং স্নান করিয়ে দিয়ে আশীর্বাদ প্রার্থনা করে। সন্ধ্যায় সকলে স্থানীয় বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে ধর্ম অনুশীলনে মশগুল থাকে। ভিক্ষুসংঘ কর্তৃক ধর্মদেশনা শুনে অনাগত দিন সুখেশান্তিতে কাটানোর জন্য বিশেষ প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করে। এভাবে গজ্যাপজ্যা দিনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

received 458944740037810

‘বৈসাবি’ উৎসব পালনে পাহাড়ির এবার একটু ব্যতিক্রমী হয়েছে। পার্বত্য-চট্টগ্রামে স্থিতিশীল পরিবেশ হলে কিছু কিছু চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামে রাত ভর ঘিলা খেলা এবং চারণ কবিদের (গেংগুলীদের) দিয়ে পালা গানেরও আয়োজন করা হয়েছে। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ও তাদের গ্রামে আয়োজন করেছে ঐতিহ্যবাহী গড়াইয়া নৃত্যের এবং মার্মারা সাংগ্রাই উৎসব করে।‘পহেলা বৈশাখ’ এবং পাহাড়ের ‘বৈসু’,‘সাংগ্রাই’ ও ‘বিষু’ উৎসব পালন সবার জন্য আনন্দমুখর হোক। দেশের জনগণের সুখ শান্তি এবং দেশের সমৃদ্ধি কামনায় নতুন যাত্রার মধ্যে দিয়ে আগমন ঘটুক নতুন বছরের এটা সবার কামনা।