বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম আকর্ষণ এর পাহাড় ও গ্রাম। দেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বিস্তৃত পার্বত্য এলাকা যেমন বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি, তেমনি উত্তর-পূর্বে মেঘালয় সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চল, প্রকৃতির এক অনন্য সুষমা ছড়িয়ে রেখেছে। এসব পাহাড়-পর্বতের পাদদেশে ও মাঝে গড়ে ওঠা গ্রামগুলো দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও জীববৈচিত্র্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
গ্রামের জীবনযাত্রা এখানকার প্রকৃতির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। পাহাড়ের কোলঘেঁষা গ্রামগুলোতে বসবাসরত আদিবাসী ও স্থানীয় বাঙালি জনগোষ্ঠী যুগ যুগ ধরে পাহাড়ি পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে জীবনযাপন করে আসছে। তাঁরা মূলত ঝুম চাষ, মৎস্য চাষ, বাঁশ ও কাঠের সামগ্রী তৈরির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। বিশেষ করে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মণিপুরি ও মুরং জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও জীবনধারা পাহাড়ি গ্রামগুলোর অন্যতম আকর্ষণ।
এছাড়া বাংলাদেশের পাহাড়ি গ্রামের আবহাওয়া বেশ মনোরম। উচ্চতার কারণে এখানে তুলনামূলক ঠান্ডা জলবায়ু বিরাজ করে, যা প্রচণ্ড গরমের সময়ও আরামদায়ক অনুভূতি দেয়। গ্রামগুলোতে ছোট ছোট ঝর্ণা, নদী ও জলধারা পাহাড়ের সৌন্দর্যকে আরও বর্ধিত করে। বান্দরবানের নীলগিরি, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ কিংবা সিলেটের জাফলংয়ের মতো জায়গাগুলো পাহাড়ি গ্রামের এক অনন্য রূপ তুলে ধরে।
শহরের ব্যস্ত জীবন থেকে দূরে থাকা এই গ্রামগুলো পর্যটকদের জন্যও এক আকর্ষণীয় স্থান। পাহাড়ের ওপর থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা, মেঘের রাজ্যে হাঁটার অনুভূতি, স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেওয়া—এসবের অভিজ্ঞতা সব সময়ই মনে রাখার মতো। সাম্প্রতিক সময়ে, পর্যটন খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ায় পাহাড়ি গ্রামগুলোতে হোমস্টে, স্থানীয় রিসোর্ট ও গাইড সার্ভিসের প্রসার ঘটছে, যা স্থানীয় অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
তবে, পাহাড়ি গ্রামের জীবনের কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। রাস্তা-ঘাটের অভাব, শিক্ষার সীমিত সুযোগ, স্বাস্থ্যসেবার স্বল্পতা ও পরিবেশগত ঝুঁকি এখানকার মানুষের জন্য বড় সমস্যা। বন উজাড়, ভূমিধস ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক গ্রাম হুমকির মুখে পড়ছে। তাই টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকার গ্রামগুলোকে রক্ষা করা জরুরি।
বাংলাদেশের পাহাড় ও তার কোলে অবস্থিত গ্রামগুলো শুধু দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং এর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যেরও অন্যতম উদাহরণ। পাহাড়-পর্বত আর সবুজ প্রকৃতির মিশেলে গড়ে ওঠা এই গ্রামগুলো সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা গেলে, এটি শুধু স্থানীয়দের জীবনমান উন্নত করবে না, বরং দেশের পর্যটন শিল্প ও অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : নিউটন চাকমা
সিএইচটি বার্তা