মিঠুন সাহা, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ
খাগড়াছড়ির পানছড়িতে মনসাপূজা উপলক্ষে মাসব্যাপী বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে গোপাল হাজারীর বাড়িতে দলবেঁধে মনসা পুঁথি পাঠ করছেন পুরুষরা। এই সময় বিভিন্ন গানের সুরের সঙ্গে একজন একজন করে একাধিক পুরুষ পুঁথির কলি পাঠ করছেন এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নারী ও পুরুষরা তাতে ঠোঁট মিলিয়ে গেয়ে যাচ্ছেন।
১৭ জুলাই (বুধবার ) রাত ১১ টার সময় পানছড়ি বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল হাজারীর উদ্যোগে তার বাড়িতে জমজমাট পুঁথি পাঠের আসরের দৃশ্য দেখা যায়। যা চলবে ভোর রাত পর্যন্ত।
জানা যায়, মনসা একজন লৌকিক দেবী। তার অসাধারণ জনপ্রিয়তার কারণে হিন্দু সমাজের সকল সম্প্রদায় তাকে দেবী হিসেবে মর্যাদা দেয়। দেবী মনসার পূজা আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে পালন করে। বর্ষার প্রকোপে এ সময় সাপের বিচরণ বেড়ে যায়, তাই সাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভক্তকূল দেবীর আশ্রয় প্রার্থনা করে। এছাড়া ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতির জন্য সর্পদেবীর ভক্ত তার দ্বারস্থ হয়। মনসা পূজা উপলক্ষে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার নারী/পুরুষরা শ্রাবণ মাসের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি ঘুরে মনসার পুঁথি পাঠ করেন। পুঁথিপাঠের আসরের এ আয়োজন চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। সারাদিনের সকল কাজকর্ম সেরে রাত ১১টা থেকে পুঁথিপাঠে অংশ নেন পুরুষরা। আর নারীদের অংশগ্রহণ দেখা যায় বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
পুঁথিপাঠক বিপ্লব পাল বলেন, আমরা অনেক বছর যাবত দেবী মনসার পূজা উপলক্ষে পুঁথি পাঠ করি। আমি ছোট বয়স থেকে বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে, বিভিন্ন মন্দিরে বন্ধুদের সঙ্গে পুঁথিপাঠে অংশগ্রহণ করে আসছি।
গোপাল হাজারী বলেন, মনসার পুঁথিপাঠের বিষয়টি শুধুই ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি একই সঙ্গে সংস্কৃতির অংশ। মনসার কাহিনি নিয়ে কালজয়ী সাহিত্য রচিত হয়েছে। তবে অঞ্চলভেদে পুঁথি ও তার পঠনরীতি আলাদা। শ্রাবণ মাসের প্রথম দিন থেকে এই পুঁথিপাঠ আরম্ভ হয়, চলে মাসব্যাপী। আর পানছড়িতে প্রথম আমার বাবা জোগেশ চন্দ্র হাজারী ও মা শিশুবালা হাজারি ১৯৪৮ সালের দিকে পুঁতি পাঠের আসর দিয়েছিলেন। আর সেখান থেকে পানছড়ির বিভিন্ন এলাকায় বাড়িতে বাড়িতে পুঁতি পাঠের আসর হতো। প্রতিবছর আমরা শ্রাবণ মাসের প্রথম দিন ও শেষ দিন পুঁতি পাঠের আসরের আয়োজন করে থাকি। পালাগান, কবিগান ও পুঁথিপাঠের আসর মানুষের মাঝে দারুণ প্রভাব ফেলে।
অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশে গ্রামীণ ও লোকজ সংস্কৃতির এ ধরনের অনুষ্ঠানে নানা বর্ণের মানুষের ভিড় থাকত চোখে পড়ার মতো। একসময় গ্রামেগঞ্জে প্রতিনিয়ত এসব অনুষ্ঠান হলেও কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে যাচ্ছে।