মিকেল চাকমা, রাঙ্গামাটিঃ
সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী ফুটবলারদের গতকাল সকালে সংবর্ধনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। প্রধান উপদেষ্টার সংবর্ধনা পেয়ে ভীষণ ভাল লেগেছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়া নারী ফুটবলের সেরা গোল রক্ষক রূপনা চাকমা।
গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে রূপনা চাকমা বলেন, আমরা সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা সংবর্ধনা দিয়েছেন এটা আমার ভীষণ ভাল লেগেছে। আমাদের অধিনায়ক ও সিনিয়র খেলোয়াররা প্রধান উপদেষ্টা ও সরকারের কাছে খেলোয়ারদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের দাবি পুরণের আশ্বাস দিয়েছেন।
টানা দ্বিতীয় বারের মত বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। রূপনা চাকমা সেরা গোল রক্ষক হওয়ায় দারুণ খুশি তার মা কালা সোনা চাকমা। শনিবার বিকেলে নিজ বাড়িতে বসে নিজের আনন্দের কথা জানিয়ে বলেন- টেলিভিশনে আমাদের মেয়েদের বিজয় দেখে খুবই ভাল লেগেছিল। রূপনা যখন বলের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে বল ধরে গোল আটকিয়ে দেয় তখন তার জন্য বেশ কষ্ট লাগে। মনে মনে বলি কি জানি মেয়েটির কতই না কষ্ট হয়। কালাসোনা চাকমার দরিদ্র পরিবারে এখন রূপনাই ভরসা। ২০২২ সালে প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হবার পর রূপনাদের বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। সেই বাড়িটি নির্মাণের জন্য ভুইয়া আদাম গ্রামের কার্বারী ব্রজমোহন চাকমার ছেলে জ্যোতি চাকমার কাছ থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকায় ৫ শতক জমি ক্রয় করা হয় বলে জানান।
তিনি আরও বলেন, এর আগে আমাদের কোন জায়গা জমি ছিলনা। তবে মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য একটা সরকারি চাকরি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
কালাসোনা চাকমা বলেন- আমাদের মেয়েরা তো চিরকাল খেলাধুলা করতে পারবে না। এক সময় তাদের ঘর সংসার হবে। ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য একটি সরকারি চাকুরি অবশ্যই দরকার। নিজের মেয়েকে ফুটবলার তৈরিতে যারা ভুমিকা রেখেছেন তারমধ্যে বীরসেন চাকমা, জুনুমা ছড়ার দেওয়ান মাষ্টার বাবুকে কৃতজ্ঞ চিত্তে শ্রদ্ধা জানান কালাসোনা চাকমা। রূপনা চাকমা যখন মায়ের পেটে তখন তার বাবা গাঝা মনি চাকমা অজ্ঞাত ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তখন ৪টি অবোধ সন্তান নিয়ে জীবন সংগ্রামে নামতে হয় কালা সোনা চাকমাকে। অন্যের বাড়ির ঢেকিশাল বা ধান ভাঙার ঘরে রাত কাটাতে হয়েছিল। সবার ছোট মেয়ে রূপনা ফুটবলার হওয়ার এখন ধীরে ধীরে দুঃখ দুর হতে চলেছে বলেও জানান।
তিনি আরো বলেন- আমার মেয়ে তো ভুল-বেদম (অতি নিরীহ-সহজ সরল)। চ্যাম্পিয়ন হবার পর মনিকা, ঋতুপর্ণারা যখন টিভির সামনে নাঁচতে থাকে তখন মনে মনে রূপনাকে খুজি। তাকে দেখি না।
রূপনা চাকমার বড় ভাই শান্তি জীবন চাকমা বলেন- রূপনা ফুটবলার হবার পর পরিবারের দারিদ্রতা দুর হচ্ছে। আমাদের কোন জমি ছিলনা। গ্রামের একজনের কাছ থেকে দুই খানি ধান্যজমি বন্ধক রেখেছি। সেখান থেকে বছরের খোরাকিটা জোটে। আগের মত ভাতের চিন্তা করতে হয়না। বড় এমাউন্টের টাকা প্রয়োজন হলে রূপনা ব্যবস্থা করে দেয়। তারও তো ভবিষ্যৎ আছে। তাই সবসময় তাকে টাকার কথা বলি না।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের কনসাল্টেন্ট (গর্ভন্যান্স) অরুনেন্দু ত্রিপুরা বলেন- বাংলাদেশ নারী ফুটবলাররা দীর্ঘ সময় ধরে নানা বঞ্চনার সম্মুখীন। বর্তমান ক্রীড়া উপদেষ্টা তাদের বাস্তবতা উপলব্দি করছেন। তিনি কোটি টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তাকে সাধুবাদ জানাই। নারী ফুটবলারদের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তাদের নামে ব্যাংকে এফডি (ফিক্সড ডিপোজিট) ব্যবস্থা করে দেয়া যেতে পারে। তাদের পেশা দারিত্বের উৎকর্ষতার জন্য আরো সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার। পাহাড়ি নারী ফুটবলারদের জন্য পার্বত্য উপদেষ্টা স্বপ্রণোদিত হয়ে আর্থিক সুবিধার বিষয়টি নিশ্চিত করে দিতে পারেন।
প্রসঙ্গত, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র অর্জন হল নারী ফুটবলারদের সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ। তাই পাহাড়ের নারী ফুটবলারদের আর্থিক নিরাপত্তা বিধানে সরকার দায়িত্ব নিয়ে প্রত্যেক খেলোয়ারের নামে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা করে ব্যাংকে এফডি (ফিক্সড ডিপোজিট) করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন পাহাড়ের ক্রীড়াবিদ, সুশীল সমাজ ও সচেতন মহল।
সম্পাদক ও প্রকাশক : নিউটন চাকমা
সিএইচটি বার্তা