বিশেষ প্রতিবেদকঃ
গত কিছুদিন ধরে বান্দরবান জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অর্ন্তকোন্দলে বিদ্রোহী গোষ্ঠি আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার জান্তা সরকার সেনাবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। এর জের ধরে মিয়ানমারের আরাকান আর্মিদের জান্তা সরকারের ক্যাম্প দখল করে নিয়েছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী আরাকান আর্মিরা। এখনো কিছু কিছু এলাকায় থেমে থেমে দু’পক্ষের মধ্যে চলছে গোলাগুলির ঘটনা।
বান্দরবানের ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত কোন সীমান্তবর্তী এলাকায় গোলাগুলি কিংবা মর্টারশেলের শব্দ শোনা যায়নি। যার ফলে নাইক্ষ্যংছড়ি ও ঘুমধুম স্থানীয়দের মাঝে কিছুটা স্বস্তির ফিরলেও এখনো আতঙ্ক কাটেনি এই এলাকার জনমনে। গত কয়েকদিন আগে বিদ্রোহী গোষ্ঠি আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি ও সংঘর্ষকালে প্রাণে বাঁচাতে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী দিয়ে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষাকারী বিজিপির শতাধিক সদস্য বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। এ্ই পর্যন্ত বাংলাদেশে আনুমানিক ৩৩০ জন মিয়ানমারের বিজিপির সদস্য আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয় নেয়া পালিয়ে আসা বিজিপির সদস্যদের নিরস্ত্রীকরণ করে খাবার ও আশ্রয় দেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি।
এদিকে আজ দুপুর সাড়ে ৩ টায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষাকারী বাহিনী বিজিপি ১০০ জন সদস্যকে প্রশাসনিক সুবিধা বিবোচনা করে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে টেকনাফের হ্নীলাতে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে এখনো ঘুমধুম উচ্চ বিদদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষাকারী বাহিনীদের এখনো স্থানান্তর করা হয়নি।
অপরদিকে সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত হয়ে উঠায় উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া ঘুমধুম-তুমব্রু, জলপাইতলী সীমান্তের ২৪৩ জন বাসিন্দা গতকাল ঘরে ফিরে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মনে এখনো আতঙ্কের বিরাজ করছে।
মিয়ানমার জান্তা সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ছয়জনের ও নিহত হয়েছে দুইজন। স্থানীয়রা জানান, গত তিনদিন ধরে সীমান্ত থেকে কোন গোলাগুলি শন্দ শোনেননি। সীমান্ত পরিস্থিতি অবনতির হওয়ার পর সবাই বাসায় ফিরেছেন। বাজার গুলোতে বেড়েছে সাধারণ মানুষের আনাগোনা। দোকানপাট গুলো খুলতে শুরু করেছে। কিছুটা স্বস্তির ফিরলেও এখনো আতঙ্কে রয়েছে সীমান্ত বসবাসকারীরা।
তুমব্রু এলাকার স্থায়ী বাসিন্দারা জানান, গত কয়েকদিন আগে গোলাগুলির ঘটনা শুরু হয়েছিল ভয়ে সবাই পালিয়ে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর স্থানীয়রা বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। সীমান্তে গোলাগুলির কারণে চাষাবাদ কিছুটা বন্ধ রয়েছে। সবকিছু ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে আত্বীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। এখন স্বাভাবিক হওয়াতেই স্বস্তিতে ফিরেছে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, বুধবার দুপুরের পর থেকে আজকে সকাল পর্যন্ত কোনো গুলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। পরিস্থিতি শান্ত হয়ে উঠায় আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া লোকজন ঘরে ফিরে গেছে।
তিনি আরও বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠায় ভয়ে ও আতঙ্কে দূরদূরান্তে আত্মীয় স্বজনের বাসা-বাড়িতে চলে যাওয়া লোকজনও ফিরতে শুরু করেছে। সীমান্তবর্তী তুমব্রু বাজারে দোকানপাট খুলেছে। বাজার গুলোতে লোকজনের আনাগোনাও বেড়েছে।
বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, আজ দুপুরে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষাকারী বিজিপির একশত জন সদস্যকে টেকনাফে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ছবিঃ সংগৃহিত।