প্রিন্স এডওয়ার্ড মাংসাং, বিশেষ প্রতিনিধি, টাঙ্গাইলঃ
মধুপুর বনাঞ্চলের বাসিন্দা গারো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছয় বছরের এক শিশুকে তারই নিজ জাতির ২৫ বছরের এক যুবক কয়েকবার ধর্ষণ করেছে। কন্যা শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মধুপুর থানায় বাদি হয়ে গতকাল সোমবার মামলা করেছেন শিশুটির মা।
মধুপুর থানায় দায়ের হওয়া মামলা থেকে জানা যায়, গত ৭ নভেম্বর উপজেলার পাহাড়ি গ্রাম বেদুরিয়ার স্কুল পড়ুয়া এক গারো শিশুকে সেলেষ্টিন নকরেকের ছেলে “মিসর ডিও” নামক এক গারো যুবকের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। শিশুর রক্তক্ষরণে অবস্থা দেখে মা জিজ্ঞাসা করলে এ ঘটনাটি জানতে পারে। পরবর্তীতে গ্রামের মাতাব্বরদের এই ব্যাপারে জানালে, গ্রামের কয়েকজন গারো মাতাব্বর (নেতা) নিপীড়নের বা ধষর্ণের কথা কাউকে জানাতে বারন করেন এবং ঘটনায় থানায় মামলা না দিয়ে গারো সমাজের প্রচলিত মারাং রীতি অনুযায়ী বিচার করার জন্য গোপনে সালিশ ডাকেন। সেখানে উভয় পক্ষকে ডেকে ধর্ষক মিসর ডিওকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ১০ হাজার টাকা শিশুটির চিকিৎসার জন্য এবং বাকি ১০ হাজার মারাং বা গ্রামীণ ভোজ পর্বের খরচের জন্য রাখা হয়। এর মধ্যে শিশুরটির শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে গত শনিবার রাতে তাকে গোপনে উপজেলা শহরের কোনো এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এক কান দুকান হতে হতে ধর্ষণের ঘটনাটি ফাঁস হয়ে গেলে এলাকার সচেতন গারো তরুণ-তরুণীদের বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে নিন্দা জানিয়ে পোস্ট দেয়। মারাং প্রথার নামে বর্বর শিশু নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার পোস্ট ভাইরাল হয়ে পরে এবং তীব্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে থাকে। বিভিন্ন সংগঠনের সহযোগিতায় ভয় কাটিয়ে ভুক্তভোগীর শিশুটির মা ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
এলাকার সচেতন যুবক যুবতী এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা জানান, গারোদের মারাং প্রথা ইতিহাস-ঐত্যিহের অংশ; কিন্তু বাস্তব জীবনে এটি প্রয়োগ করার আইনগত কোনো সুযোগ নেই। দেশের প্রচলিত আইন মেনেই সব অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
মধুপুর থানার ওসি ইমরানুল কবীর এবং জলছত্র অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ কদ্দুস জানান, শিশুটিকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য আজ সকালে পুলিশের সহায়তায় টাঙ্গাইল মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। ধর্ষক মিসর ডিওকে গ্রেফতারের
প্রক্রিয়া চলছে। যতদিন পর্যন্ত গ্ৰেফতার না হবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।