বিশেষ প্রতিবেদক, রাঙামাটিঃ
পার্বত্য রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের উদ্যােগে সম্প্রীতি সমাবেশের পর ৭২ ঘন্টা অবরোধ প্রত্যাহার করেছে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম বাস মালিক সমিতি। জেলাপ্রশাসনসহ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল বিএনপি, জামায়াত, সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যবসায়ি নেতাদের নানামুখি তৎপরতায় রাঙামাটির জনজীবনে স্বস্তি এলাকার আসতে শুরু করেছে।
বক্তরা জানান, পরিবহন মালিকদের ধর্মঘটের অভ্যন্তরীণ সব যানবাহন ও দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করবে পরিবহন। নৌপথে লঞ্চ চলাচল করবে। পরিবহন মালিক নেতা নঈন উদ্দিন সেলিম জানান, শুক্রবারের সহিংসতায় রাঙামাটিতে যানবাহনে ভাঙচুরের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে এই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাক দিয়েছিলেন। পরিস্থিতি উন্নয়নে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের তিনজন গুরুত্বপূর্ন উপদেষ্টাসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিবৃন্দ শনিবার রাঙামাটি পরিদর্শন করে মতবিনিময় করে যাওয়ার পর রোববার রাঙামাটিতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সম্প্রীতি সমাবেশে এই উভয় আলোচনার পর ৭২ ঘন্টার অবরোধ প্রত্যাহার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে সম্প্রীতির সমাবেশ করেছে জেলা প্রশাসক মো: মোশাররফ হোসেন খান। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকালে নিজ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেছেন জেলা প্রশাসক মো: মোশারফ হোসেন খান। এতে রাঙামাটি সদর সেনাজোন কমান্ডার মোঃ এরশাদ হোসেন চৌধূরী পিএসপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএসমং, সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা, পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন, বনরুপা মসজিদের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব চৌধুরী, জেলা বিএনপির সভাপতি দিপন তালুকদার দিপু, জামায়াতের আমীর আব্দুল আলীম বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, বৈষম্য বিরোধী ছা্ত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দসহ গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগন অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশে পাহাড়ি-বাঙালি সাম্প্রদায়িক ঘটনায় যারা হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, জেলা শহরের পৌর এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামরা স্থাপন, সম্প্রীতি রক্ষায় কমিটি গঠন, সম্প্রীতি সমাবেশ, নতুন করে আইন শৃঙ্খলা কমিটি গঠন, ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের বিষয়ে সকলকে অবহিত করা, জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ, বনরূপা এলাকায় সেনাক্যাম্প স্থাপন হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা রুজু, পাশাপাশি হত্যাকান্ডের শিকার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা প্রদানের সিন্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে, চলমান অনির্দিষ্ট্যকালের পরিবহণ ধর্মঘটের কারনে রাঙামাটির জনজীবন অচল হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সম্প্রীতি সমাবেশের পরপরই রাঙামাটির যাত্রী ও পণ্যবাহি সকল যানবাহন মালিক সমিতি ও অটোরিক্সা সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে বসেন ডিসি, এসপি, জোন কমান্ডারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ।
সর্বশেষ রাত সাড়ে আটটার সময় বৈঠকে সিদ্ধান্তের আলোকে রাঙামাটিতে চলমান অনির্দিষ্ট্যকালের পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে প্রশাসন পক্ষ থেকে জানানো হয়।