নিজস্ব প্রতিবেদক:
বান্দরবানের রুমা উপজেলা শাখা সোনালী ব্যাংক থেকে মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাত ৯টা নাগাদ অস্ত্র ও টাকা লুট করে নিয়ে গেছে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল। এসময় তারা ব্যাংক ম্যানেজার নিজামুদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজার নিজামুদ্দিন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বাসিন্দা।
এই ঘটনায় আজ (৩ এপ্রিল) রুমায় কর্মরত সরকারি কর্মচারী – কর্মকর্তারা রুমা উপজেলা প্রসাশন কার্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধন করেন।
ঘটনার ১৬ ঘন্টার মধ্যে থানচিতে সদর উপজেলায় ভরদুপুরে বাজারে ফাঁকা গুলি চালিয়ে থানচি শাখা সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে বুধবার (৩ এপ্রিল) আবারো ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
রুমা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারুল আলম ও থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাতে রুমায় সোনালী ব্যাংক লুটের সময় ডাকাতরা ব্যাংক ম্যানেজার নিজামুদ্দিনকেও অপহরণ করে নিয়ে যায়।।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার ‘রাত ৮টা নাগাদ বিভিন্ন সরকারি -বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা নামাজরত অবস্থায় থালাকালীন ডাকাতরা রুমা উপজেলা প্রশাসন কমপ্লেক্স মসজিদে হঠাৎ করে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজা বন্ধ অবস্থায় তাদের সবাইকে ডাকাতরা প্রচন্ড মারধর করে। ঐ সময় মসজিদ থেকে তারা অস্ত্র ঠেকিয়ে ব্যাংক ম্যানেজারকে জিম্মি করে ব্যাংকে নিয়ে যায়। ডাকাতরা ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশের ২ টি এসএমজি, ৬০ রাউন্ড গুলি, ৮টি চীনা রাইফেলসহ ৩৮০ রাউন্ড গুলিসহ অস্ত্রও লুট করে নিয়ে গেছে। ঘটনাটি পাহাড়ে গজিয়ে উঠা নতুন সশস্ত্র বাহিনী কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ঘটিয়েছে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। ঘটনার দীর্ঘ অনেকটা সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও রুমার সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধার করা যায়নি।
অন্যদিকে রুমা ঘটনার ১৬ ঘন্টার পর বুধবার (৩ এপ্রিল ) থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থানচি শাখার কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকে ভরদুপুরে ব্যাংক ডাকাতির তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, দুটি ব্যাংকের শাখা থেকে বিপুল পরিমাণের টাকা নিয়ে গেছে ডাকাতরা। তবে ডাকাতরা ব্যাংকের ভল্ট খুলতে পারেনি। তারা কাউন্টারে রাখা ও গ্রাহকদের উত্তোলন করা টাকা নিয়ে গেছে। এসময় ভীতি সৃষ্টি করতে ডাকাতরা ব্যাংকের ভেতরে ব্যাপক গোলাগুলি করেছে।
থানচির প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১১টার দিকে থানচি বাজার ঘিরে ফেলে ডাকাতরা। তারা ব্যাংক ও এর আশপাশের এলাকায় অস্ত্রের মুখে সবার কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এরপর তারা ব্যাংক দুটির ভেতরে ঢুকে পড়ে।
এছাড়াও ২টি ব্যাংকের ভিতরে ঘটনায় উপস্থিত থাকা গ্রাহকরা জানান, হঠাৎ করে ডাকাতরা ব্যাংকে ঢুকে কাউন্টারে জমা থাকা টাকা ও গ্রাহকদের উত্তোলন করা টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। এসম ভীতি সৃষ্টি করতে ডাকাতরা ব্যাংকের ভেতরে ব্যাপক গোলাগুলিও করেছে।
থানচি কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তাদের তথ্য মতে কৃষি ব্যাংক থেকে আড়াই লক্ষ আর সোনালী ব্যাংক থেকে পনেরো লক্ষ মোট সাড়ে সতেরো লক্ষ টাকা লুট করে পালিয়ে গেছে বলে জানা যায়। এই ঘটনায়ও কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসীরা।
এদিকে আজ (৩ এপ্রিল) রুমা শাখার সোনালী ব্যাংকে ঘটে যাওয়া হামলা ও ডাকাতির ঘটনা তদন্তে কক্সবাজার থেকে রুমায় যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)’র একটি দল।
বান্দরবানের রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংকের শাখা থেকে কোনও অর্থ লুট হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এ সময় সিআইডির চট্টগ্রাম রেঞ্জের কর্মকর্তা অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ নেওয়াজ খালেদ বলেন, “কক্সবাজার থেকে ক্রাইম সিনের দুটি তদন্ত দল এসে ব্যাংকের সব আলামত সংগ্রহ করেছে। তারা ব্যাংকের ভল্টের সব টাকা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। সেখানে ভল্ট খুলে টাকা গুণে দেখার পর মোট ১ কোটি ৫৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকা পেয়েছে। সব টাকাই ভল্টে আছে। ডাকাতরা ব্যাংকের ভল্টে সুরক্ষিতভাবে রাখা টাকাগুলো লুট না হওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেন।
রুমা ঘটনার পরদিন আজ দুপুরে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে রুমার সোনালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
রাতে রুমা ও দিন দুপুরে থানচি উপজেলায় ব্যাংক ডাকাতি ও রুমা সোনালী ব্যাংকের ম্যানাজারকে অপহরণের মূল হোতা পাহাড়ে নতুন সংগঠিত বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর কারসাজি বলে ধারণা স্থানীয়দের।