খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ
খাগড়াছড়ির রামগড়ে উত্তরাধিকার সনদপত্র জাল জালিয়াতি করে মৃত ভারত চন্দ্র ত্রিপুরার নামীয় সম্পত্তি আত্মসাত ও সড়ক প্রস্থকরণ প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে দোঅংগ্য মগ নামে এক মারমা সম্প্রদায় ব্যক্তির বিরুদ্ধে। আত্মসাতকারী অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন দোঅংগ্য মগ। সে রামগড় উপজেলার ১নং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড অধিনস্থ গরুঁকাটা নামক স্থানের বাসিন্দা।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগের অধীনে বারৈয়ারহাট ‘হেয়াকো’ রামগড় সড়ক প্রস্থকরণ শীর্ষক প্রকল্প (Loc-111) এর ৬.৮৮ হেক্টর বা ১৭.০০একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে এই প্রকল্পে ‘অধিগ্রহণে ১ম ধাপে পড়া ৯৪৩ নং হোল্ডিং ৪৯ শতক ভূমি’র মালিক হচ্ছে মৃত ভারত চন্দ্র ত্রিপুরা “পিতা মংক্রই ত্রিপুরার যাহা দলিলপত্র ও রামগড় ভূমি-অফিসে রেকর্ড রয়েছে।
মৃত ভারত চন্দ্র ত্রিপুরার ‘ছেলে কুমারীয়া ‘ত্রিপুরা ও ‘মোস্তফা নবমুসলিম (স্বাধীন) জানান, আমরা ভারত চন্দ্র ত্রিপুরার ছেলে আমাদের পিতা মৃত্যুর পর আমরা ভাই বোনেরা এক সাথে না থাকার ‘কারণে বাবার সম্পত্তি’র ‘খোঁজ-খবর রাখা ও বন্টন নামা ‘করা সম্ভব হয়নি ‘এবং পিতার উত্তরাধিকার সনদ করাও হয়নি আমাদের। এখন বিশেষ প্রয়োজনে ওয়ারিশন সনদের জন্য খাগড়াছড়িতে ওয়ারিশন মামলা নং ২৮৫/২৩ রাম আবেদন করার পর স্থানীয় মেম্বার প্রতিবেদন নিয়ে ২২৯ নং রামগড় মৌজা প্রধান মংশেপ্রু চৌধুরীর কাছে গেলে তিনি আমাদের জানান ভারত চন্দ্র ত্রিপুরার উত্তরাধিকার সনদ মামলা নং ৬১৫/০৬তে হয়ে গেছে। তখন খোঁজ খবর নিয়ে দেখি আমাদের পিতার নাম ব্যবহার করে মার্মা সাম্প্রদায়ের দোঅংগ্য মগ নামে এক ব্যাক্তি ২০০৬ সালে ভূয়া ওয়ারিশন সনদ বানিয়ে আমাদের ‘পিতার সম্পত্তি গোপনে ভোগ এবং বিক্রি করে খাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমরা রামগড় ভূমি অফিসে গিয়ে দেখতে পেলাম আমার পিতা ভারত চন্দ্র ত্রিপুরার নামে ২টি হোল্ডিং রয়েছে। যা ৯৪৩ নং হোল্ডিংএ ২ একর ভূমি ও ২৬৬নং হোল্ডিং ৩ একর ভূমি বর্তমানে রেকর্ড রয়েছে যা জমাবন্ধী নকল খাজনা দাখিলায় উল্লেখ্য আছে।
তারা আরো বলেন, সড়ক প্রস্থকরণ প্রকল্পে ৯৪৩নং হোল্ডিংর ১ম ধাপে অধিগ্রহণে ৪৯ শতক ভূমির টাকা দোঅংগ্য মগ ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর শাহাবুদ্দিন গংরা ভূয়া ওয়ারিশন দিয়ে তুলে নিয়েছে। বিষয় গুলো জানার পর আমরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে ‘জানিয়েছি এবং ৪/৪/২৩ খাগড়াছড়ি ডিসি বরাবর ভূয়া ওয়ারিশন সনদ সৃজিত ‘বাতিলের আবেদন করলে ডিসি তদন্তের জন্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও চেয়ারম্যান হেডম্যানকে সরেজমিনে তদন্ত করে লিখিত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। ডিসি’র নির্দেশ অনুযায়ী চেয়ারম্যান ইউনিয়ন গ্রাম আদালতে উভয়ের কাগজপত্র দেখে শুনানি করেন। আমরা ২ ভাই ২ বোন ভোটার আইডি চেয়ারম্যান সনদ পিতার মৃত্যু সনদ জম্ম সনদ জমির দলিলপত্র সহ সমস্ত ডকুমেন্ট উপস্থাপন করি। আর দোঅংগ্য মগ কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। বরং তারা গ্রাম আদালত থেকে কাউকে কিছু না বলে পালিয়ে যায়। চেয়ারম্যান’ হেডম্যান শুনানি শেষে রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর উভয় পক্ষের শুনানি করেন ইউএনও। তখন আমাদের যাবতীয় কাগজপত্র উপস্থাপন করি। পর্বতীতে জানতে পারি শুনানি শেষে ইউএনও মমতা আফরিন তার প্রতিবেদনে আমরা ভারত চন্দ্র ত্রিপুরার ওয়ারিশ না বলে উল্লেখ্য করেন। ‘ইউএনও-র মনগড়া/একতরফা প্রতিবেদনের কারণে আমরা পিতার ওয়ারিশন থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা এমন একতরফা প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা এবং বিষয়টি পূন্ঃতদন্তের দাবী জানিয়ে গত ১৫ জানুয়ারীতে সংবাদ সম্মেলনও করেছি।’ স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বার কার্বারীসহ এলাকার সবাই জানে আমরা ‘যে মৃত ভারত চন্দ্র ত্রিপুরার ওয়ারিশ ‘শুধু ইউএনও’র প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয় আমরা নাকি ভারত চন্দ্র ত্রিপুরার ওয়ারিশ নয়।
অভিযুক্ত দোঅংগ্য মগের বাড়িতে গিয়ে তার সাথে আলাপ করা হলে তিনি এবিষয়ে কোন ‘কথা বলতে রাজি হননি। দোঅংগ্য মগ বলেন আমি কিছু জানিনা সব জানে শাহাবুদ্দিন কমিশনার। এদিকে লালছড়ি এলাকার ত্রিপুরা সাম্প্রদায়ের ৩ কার্বারীদের একটি প্রতিবেদন দেখা গেছে দোঅংগ্য মগ গংরা মৃত ভারত চন্দ্র ত্রিপুরা’ ওয়ারিশ না। ৬নংওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ ইসমাইল হোসেনের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয় দোঅংগ্য মগ ‘গংরা মৃত ভারত চন্দ্র ত্রিপুরার ওয়ারিশ নয়। এবং গ্রাম পুলিশ সামছুল হকের এক তদন্ত প্রতিবেদনেও উল্লেখ্য করা হয় যে দোঅংগ্য মগ গংরা মৃত ভারত চন্দ্র ত্রিপুরার ওয়ারিশ না।
আরেক অনুসন্ধানে জানা গেছে, লালছড়ি’র কাশি মগের ছেলে জানান বার মগ আমার-জেঠা আর মংক্র মগ দাদা লাগে দোঅংগ্য মগ ভাই লাগে ‘বার মগ ত্রিপুরা না সে মগ ছিলো। মৃত ভারত চন্দ্র ত্রিপুরার মেয়ে ফেরম লক্ষী ত্রিপুরা জানান সোনাইপুলের শাহাবুদ্দিন কমিশনার আমাকে বিধবা ভাতা দিবে বলে NID নিয়ে যায় তারপর ২ বছরেও বিধবা ভাতা দেয় নাই। NID তার কাছে রেখে দিয়েছে।
রামগড় ১নং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাহআলম মজুমদার জানান, ডিসি অফিস থেকে সৃজিত ওয়ারিশন সনদের বিষয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে আমার কাছে। এবিষয়ে আমি উভয়ের সাথে আলাপ আলোচনা করে এবং নোটিশের মাধ্যমে ডেকে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখেছি। তার মধ্যে কুমারীয়া ত্রিপুরা তাদের পিতা মাতা’র যাবতীয় কাগজপত্র দেখিয়েছে আর দোঅংগ্য মগ কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এলাকার কার্বারী সহ গন্যমাণ্য ব্যাক্তিদের তথ্য মতে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে দোঅংগ্য মগ গংরা মৃত ভারত চন্দ্র ত্রিপুরার ওয়ারিশ নয়। আমি যাচাইবাছাই করে যে তথ্য পেয়েছি তদন্ত প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করে জমা দিয়েছি। উল্লেখ্য যে, যাবতীয় কাগজপত্রের আলোকে ‘দেখা যায় ভারত ‘চন্দ্র ‘ত্রিপুরার ‘পিতা’ মংক্রই ‘ত্রিপুরা ৮৬সন-৯৭সন এবং ২৩ সন পযর্ন্ত বিভিন্ন ডকুমেন্ট লিখা ত্রিপুরা। কিন্তু ২০০৬-সনে তাকে মক্রই’ মগ দেখানো হয়েছে আর তার ছেলেকে ত্রিপুরা দেখানো হয়। দোঅংগ্য মগের একটি ওয়ারিশনে যা রহস্যময়। দোঅংগ্য মগ সহ তার বোনদের জম্ম সনদ অনলাইনে চেক করে এক তথ্য আর হার্থ কপিতে আরেক তথ্য পাওয়া যায়।