প্রিন্স এডওয়ার্ড মাংসাং, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার শোলাকুড়ী ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ‘সুতানালা দীঘি’। এর পাশাপাশি পবিত্র বারো তীর্থের জলের দীঘি নামেও পরিচিত এটি।
শোলাকুড়ী বাজার থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার পশ্চিমেই এই দিঘির অবস্থান। শান বাঁধানো ঘাট, দীঘি ঘেরা দুই পাশের একপাশে আদর্শ গ্রাম আরেক পাশে একশত ঘরের গুচ্ছগ্রাম জায়গাটিকে করেছে আরো বৈচিত্রময়। এ দীঘির পাড়েই মধুপুর উপজেলার সবচাইতে বড় উচ্চ গ্রাম অবস্থিত, এখানে অসহায় হতদরিদ্র ১১০টি পরিবারকে সরকারিভাবে ঘর দেওয়া হয়েছে। আছে মুক্তিযোদ্ধার জন্য বীরনিবাস, তারও আগে থেকে দীঘির পূর্ব পাশে আছে সরকারিভাবে আদর্শ গ্রাম। এক পাশে আদর্শ গ্রাম, আরেক পাশে গুচ্ছগ্রাম এবং পাশেই আছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তাই এই দীঘির পাড়টাকে আরো গুরুত্ব করে তুলেছে।
এই দীঘির পানি দুই গ্রামের মানুষের পানির চাহিদা মেটাতে এবং কৃষি ফসলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পাশাপাশি সরকারিভাবে এই দীঘিতে চাষ করা হয়ে থাকে মাছ। সেই মাছ ধরার জন্যও টিকিটের মাধ্যমে নেওয়া হয় বিশেষ ব্যবস্থা। মাছের যে লভ্যাংশ আসে সেটি দুই গ্রামের লোকজনদের মাঝে সমবন্টন করে দেয়া হয়‼️
কথিত আছে, এ অঞ্চলের গহীণ অরণ্যে বাস করতেন রাজা ভগদত্ত। মাতৃভক্ত এই রাজার মা একবার ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। কোনো চিকিৎসায় তিনি সুস্থ হচ্ছিলেন না, সুস্থ না হওয়ায় স্বপ্নে দেখেন বারো তীর্থের জল দিয়ে স্নান করলে তিনি আরোগ্য লাভ করবেন।
মায়ের আদেশে রাজা ভগদত্ত ১২ রাজকর্মীকে ঘোড়ায় করে পাঠিয়ে দেন বারো তীর্থের জল আনতে। তারা ভারতের বৃন্দাবন, মথুরা, প্রয়াগ, গয়া, কাশি এরকম বারো তীর্থ থেকে জল এনে বর্তমানে শোলাকুড়ীতে যে স্থানে দীঘি সেখানকার মাঝখানে বসিয়ে বৈশাখের অমাবস্যার রাতে রাজার মাকে স্নান করালে তিনি সুস্থতা/আরোগ্য লাভ করেন।
পরে রাজা বারো তীর্থের পবিত্র জল সংরক্ষণের লক্ষ্যে সেখানেই দীঘি খননের জন্য সুব্যবস্থা করেন। সেই দীঘিই এখন শোলাকুড়ীর বারো তীর্থের জলের দীঘি। এই কাহিনীকে ঘিরে তখন থেকেই এ দীঘির জলে পূণ্যস্নান, পূজা অর্চনাসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। বারো তীর্থের পূর্ণ স্নান এবং পূজা অর্চনাকে ঘিরে এখানে কয়েকদিনব্যাপী বিশাল মেলার আয়োজনে হয়ে থাকে।
ঐতিহ্যবাহী বিশাল এই দীঘি প্রায় সাড়ে বাইশ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত, এই স্বচ্ছ জলের দীঘি দেখতে দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থী এবং পনার্থীরা ঘুরতে আসেন।
কিন্তু ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে দীঘির পাড়ে খোলা প্রস্রাব খানা এবং পায়খানা ব্যবহার করে পানিটাকে দূষিত করা হচ্ছে এ ব্যাপারে মধুপুর প্রশাসনের সুদৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।