মিকেল চাকমা, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
আবারও ২য় বারের মত উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ- ২০২৪ মুকুট অর্জন করেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলও। এবার দেশের হয়ে আলো ছড়ালো পাহাড়ের বীর কন্যারা। নেপালের গোলবারে যে দুইটি বল গিয়েছে; তার দুটোই দিয়েছেন পাহাড়ের বীর কন্যা মনিকা চাকমা ও ঋতুপর্ণা চাকমা।
শেষ দিকে ৮১তম মিনিটে ঋতুপর্ণা’র দুর্দান্ত এক গোলে ২-১ গোলে সমান ম্যাচে ফের পিছিয়ে পড়লো নেপাল। এর আগে ৫২তম মিনিটে প্রথম গোলটি দিয়েছিল মনিকা চাকমা। অবশ্য প্রথম গোলের চার মিনিটের মাথায় গোল শোধ করে দিয়েছিল নেপাল। কিন্তু ঋতুপর্ণার দুর্দান্ত গোল আর শোধ করতে না পেরে নিজেদের মাঠে হেরেই মাঠ ছাড়লো নেপালের নারী ফুটবল টিম।
ঋতুপর্ণা চাকমার গ্রামের বাড়ি রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের দুর্গম মঘাছড়ি গ্রামে। যেখানে যাওয়ার জন্য ভালো সড়কও নেই। পায়ে হাঁটা পথের গ্রাম থেকে উঠা আসা ঋতুপর্ণা আজ দেশের সাফল্যের তারকা। পাহাড়ের বীর কন্যাদের এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত সকলেই। ছোটবেলায় মারা গেছেন ঋতুপর্ণার বাবা। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে গেলো বছর মারা গেছেন ছোট ভাইটিও। পরিবারের অভিভাবক হিসেবে আছেন মা বজুপতি চাকমা। মেয়ের এমন চমৎকার কৃতিত্বে বেশ আবেগাপ্লুত ঋতুপর্ণার মা বজুপতি চাকমা। হাসি আর আনন্দ অশ্রুতে যেন ভিজেই যাচ্ছে তার দু’চোখ। চোখের কোণে কোণে সুখের ও খুশির অশ্রুবিন্দুতে হৃদয়ভরা ভালবাসার শব্দহীন প্রকাশ অন্যদের হৃদয়কেও আলোড়িত করে দেয়।
শুক্রবার দুপুরে নিজ বাড়িতে নিজের অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে বজুপতি চাকমা বলেন, আমার মেয়ে ঋতুপর্ণা চাকমার এমন সাফল্যে আমি দারুণ খুশি। এই মেয়েটি আমার ছেলে এই মেয়েটিই আমার মেয়ে। সে যাতে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে, আরো বেশি বেশি সুনাম এনে দিতে পারে দেশবাসীর কাছে সেই আর্শীবাদ চাই। নিজের মেয়েকে ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষক বীরসেন চাকমা, শান্তিমনি চাকমাসহ সকল শিক্ষকবৃন্দ, বিকেএসপির সকল প্রশিক্ষকগণকে গভীর কৃতজ্ঞতাও জানাতে ভুলেননি বজুপতি চাকমা।
তিনি আরও বলেন, সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ ২০২২ অর্জনের পর প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে নিজেদের জন্য ঘর করে দেয়া এলাবাসীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে রাস্তা করে দেয়া ও নিরাপদ পানীয় জলের সুব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল যা কোনটিই বাস্তবায়ন হয়নি।
ঋতুপর্ণাদের একসময়কার কোচ শান্তি মনি চাকমা জানান, আমার বর্তমান সময়ের উদীয়মান খেলোয়াড়দের নিয়ে আজ মোবাইলে সাফ চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনাল খেলা দেখেছি। পুরো ম্যাচই সবাই ভালো খেলেছে তারা। ঋতুপর্ণার দুর্দান্ত গোলে আবারও সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ বিজয়ী হলো বাংলাদেশ। এটি সারাদেশের জন্য গর্ব। পাহাড়ের মানুষের, আমাদের আনন্দের ভাষা নেই। আমরা চাই তারা যেন দেশের জন্য আরও সাফল্য বয়ে আনতে পারে।
ঋতুপর্ণা চাকমা ভিডিও বার্তায় বলেন, সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ ২০২৪ অর্জন করায় আমি অনেক খুশি। এটি পুরো দেশের মানুষের আর্শীবাদে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। আমার ব্যক্তিগতভাবে কোন চাওয়া পাওয়া নেই। তবে গতবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ ২০২২ অর্জনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমার ঘর করে দেয়া, গ্রামের পাকা রাস্তা করে দেয়াসহ নানা ধরনের আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। যা আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে এখনো বাস্তবায়ন হয়নি, আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা জানিনা।