মথি ত্রিপুরা; ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সাংবাদিক নাম ভাঙিয়ে ৭৫০০ টাকা হারে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ অভিযোগ উঠেছে পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সজীব দাসের বিরুদ্ধে।
আঁকো, টেংগা রা ব্যা ল?।( মারমা ভাষায় )এর বাংলা অর্থ হচ্ছে -দাদা, টাকা পেয়েছেন কিনা? এমনটা প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছিলেন এক জনপ্রতিনিধি মেম্বার । সে বান্দরবানে রুমা উপজেলায় পাইন্দূ ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডের নির্বাচিত মেম্বার।
রুমার এক প্রতিবেদক তাকে পাল্টা কিসের টাকা (?) এমন প্রশ্ন করলে নি:শ্বাস ছেড়ে ওই মেম্বার বলেন ওহ, তার মানে আপনি (প্রতিবেদক) কিছুই জানেন না। মেম্বাররা সবাই মিলে প্রতিজনে সাত হাজার ৫০০ টাকা করে চাঁদা তুলে সচিবের হাতে দেয়া হয়েছে। ওই টাকা সাংবাদিকদের সম্মানী হিসেবে দিবে বলে।
আরেকজন মেম্বার ঐ প্রতিবেদককে বলেছেন, তাদের চেয়ারম্যান উহ্লামং ও সচিব সজীব দাস এর পরামর্শক্রমে এক বৈঠকে বসেন। তখন প্রতি মেম্বার থেকে সাত হাজার ৫০০ টাকা করে চাঁদা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উত্তোলিত চাঁদার সব টাকা নিজের কাছে জমা রাখবার চাপ প্রয়োগ করেন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত দুই সদস্য এইসব তথ্য জানিয়েছেন।
সূত্রের ভাষ্যমতে, পুরুষ নয়জন ও তিনজন মহিলা মেম্বার সহ মোট ১২ জন মেম্বার রয়েছে একটি ইউনিয়নে। প্রতিজন মেম্বার এর কাছ থেকে সাত হাজার পাঁচশত টাকা হারে ১২ জনের মোট ৯০ হাজার টাকা আদায় করা হয় মেম্বারদের থেকে।
জানতে চাইলে পাইন্দূ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব রাজীব দাস মেম্বার প্রতি সাত হাজার ৫০০ টাকা করে চাঁদা উত্তোলনের কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি বলেছেন, এর মধ্যে এক সাংবাদিকের হাতে চার জনের জন্য ৮০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। কোন কোন সাংবাদিকদের দেয়া হয়েছে ও অবশিষ্ট টাকা কোথায় জানতে চাইলে কলটি কেটে দেয় ইউনিয়ন পরিষদ সচিব রাজীব দাস। পরে আরো কয়েকবার ফোন দিলেও কল রিসিভ করেননি সচিব রাজীব দাস। শেষে মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে ২০২৪- ২০১৫ অর্থবছরে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের জন্য কাবিটা, কাবিখা আওতায় নগদ টাকা ও খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়- সরকার।
উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের অনুকূলে উপ-বরাদ্দ প্রাপ্তির পর সভায় ইউনিয়ন পরিষদের সকল মেম্বারদের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে প্রকল্পগুলো গৃহীত হবার কথা । তবে থাকলেও এই ইউনিয়নের বরাদ্দগুলো চেয়ারম্যান ও সচিবের স্বেচ্ছাচারিতায় চুড়ান্ত করা হয়- প্রকল্প । কাগজে কলমে কার্য বিবরণী ঠিক থাকলেও কোথায় কোন জায়গায় প্রকল্প গ্রহণ করা হয় , তা অধিকাংশ মেম্বাররা জানেন না।
এমনটাই অভিযোগ করে মেম্বাররা জানান, কোন মেম্বার কি প্রকল্প পেয়েছে, তা জানানো হয় না, কার্য বিবরণীও দেখানো হতো না মেম্বারদের।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি প্রস্তুত করে সভাপতি স্বাক্ষর নিতে গেলে তখনই মেম্বাররা জানতে পারে, প্রকল্পটি কার নামে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নিজ পাড়ায় অবস্থানের কথা জানিয়ে পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেন, দেখা করে বিস্তারিত কথা হবে।
সাংবাদিকদের নাম ভাঙ্গিয়ে সচিব কর্তৃক মেম্বারদের কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলনের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিষয়টি অবগত নয় উল্লেখ করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ( পিআইও- অতিরিক্ত দায়িত্বের ) মোহাম্মদ কাওসার আলী বলেছেন, গৃহীত প্রকল্পের বিপরীতে প্রথম কিস্তির বিল দেয়া হয়েছে। শতভাগ কাজ আদায় করার পর চূড়ান্ত বিল ছাড়া হবে। এ কাজে স্থানীয়দের সবার সহযোগিতা কামনাও করেন পিআইও কাউসার।
সম্পাদক ও প্রকাশক : নিউটন চাকমা
সিএইচটি বার্তা