Dhaka , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সীমান্ত পরিদর্শনে ডিসি-এসপি

print news

 

উথোয়াইচিং (রনি):

মায়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষে গোলাগুলি, হাল্কা ও ভারি অস্ত্র সহ বিস্ফোরণের শব্দে কম্পিত হচ্ছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, ফাত্রাঝিরি, রেজু আমতলি, গর্জবনিয়াসহ সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাছাড়া ২৯ জানুয়ারি আতংকে সীমান্ত এলাকার একদিনের জন্য সাতটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।

এরই প্রেক্ষিতে বুধবার ( ৩১ জানুয়ারী) সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ঘুমধুম, তুমব্রু, ভাজাবুনিয়া, বাইশফাঁড়িসহ দীর্ঘ সীমান্ত পরিদর্শন করেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ও জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্তের ওপারে গতকাল মঙ্গলবার ১৮ টি মর্টারশেলের আওয়াজ শুনেছেন স্থানীয়রা। এ কারণে অনেকে আতংকে থাকলেও ভয়ের কোন কারণ নেই। কেননা সীমান্তে ৩৪ বিজিবির জোয়ানরা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন সার্ক্ষণিক খবরাখবর রাখছেন।

IMG 20240131 213523

তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি’র অবনতি ঘটলে বিপদজনক এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হবে। এছাড়া অত্র এলাকায় বসবাসকারীদের আতংকিত না হয়ে সজাগ থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।
এসময় আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত, তাই প্রয়োজন পড়লে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে পরীক্ষা কেন্দ্র এ বিষয়ে যোগ করেন তিনি।
জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে, সেই সাথে আমাদের পুলিশি ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা পুলিশি ব্যবস্থাকে আরো জোরদার ও ঢেলে সাজিয়েছি। তাছাড়া মায়ানমার বর্ডার এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আমজাদ হোসেন, সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট রাজেস কুমার বিশ্বাস, নাইক্ষ্যংছড়ি নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাকারিয়া, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ত্রিরতন চাকমা, ঘুমধুম তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মাহাফুজুর রহমান সহ জনপ্রতিনিধিরা ।

এদিকে বুধবার ৩১ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মর্টারশেল বাংলাদেশের ভেতরে এসে পড়ে। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ।

তিনি জানান, দুপরের দিকে মর্টারশেল পড়ে বিকট শব্দ হলে এলাকা মানুষ আতংকে এদিক সেদিক ছুটাছুটি শুরু করতে থাকে। এই ভয়ে সীমান্তের মানুষ কোন কাজ কর্ম না করে খুবই আতংকে দিনাতিপাত করছে বলে যোগ করেন তিনি।

IMG 20240131 213555

ভাজাবনিয়া সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাদার সংগঠনে সভাপতি নুরজাহান বেগম জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাদের পার্শ্ববর্তী সীমান্তের ওপারে কয়েকদিন পরপর গোলাগুলির ও ভারি গোলার শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠে। কোন সময় গোলাগুলি শুরু হয় তা বলা মুষ্কিল। এই পরিস্থিতি ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে খুবই ভয় লাগে।
তুমব্রু কোনার পাড়া এলাকার বাসিন্দা আবু সিদ্দিক জানান, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও আরাকান বাহিনীর মধ্যে চলমান বন্দুক যুদ্ধে প্রায় ভারী গোলা বিষ্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠে। মধ্যরাতে গোলাগুলি শুরু হলে ভয়ে কাঁচা ঘরের বাসিন্দারা পাড়ার বা কাছাকাছি পাঁকা দালানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। গত কাল রাতে যখন আবারও গোলা গুলি শুরু হয়েছিল তখন অন্যের ঘরে আশ্রয় না পেয়ে সীমান্ত সড়কের ওপারে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন।

উল্লেখ্য যে, মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির (এএ) সংঘর্ষ শুরু হয় দেড় বছর আগে। ২০২২ সালে জুলাই থেকে শুরু হয়ে টানা ছয়মাস যুদ্ধ চলে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী বাহিনীর মধ্যে। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে আবারো সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।

 

লেখক তথ্য সম্পর্কে

Chtbarta

জনপ্রিয়

মানিকছড়ি সদর ইউনিয়নে কৃষক সমাবেশ

সীমান্ত পরিদর্শনে ডিসি-এসপি

প্রকাশিত: ০৫:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৪
print news

 

উথোয়াইচিং (রনি):

মায়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষে গোলাগুলি, হাল্কা ও ভারি অস্ত্র সহ বিস্ফোরণের শব্দে কম্পিত হচ্ছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, ফাত্রাঝিরি, রেজু আমতলি, গর্জবনিয়াসহ সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাছাড়া ২৯ জানুয়ারি আতংকে সীমান্ত এলাকার একদিনের জন্য সাতটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।

এরই প্রেক্ষিতে বুধবার ( ৩১ জানুয়ারী) সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ঘুমধুম, তুমব্রু, ভাজাবুনিয়া, বাইশফাঁড়িসহ দীর্ঘ সীমান্ত পরিদর্শন করেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ও জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্তের ওপারে গতকাল মঙ্গলবার ১৮ টি মর্টারশেলের আওয়াজ শুনেছেন স্থানীয়রা। এ কারণে অনেকে আতংকে থাকলেও ভয়ের কোন কারণ নেই। কেননা সীমান্তে ৩৪ বিজিবির জোয়ানরা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন সার্ক্ষণিক খবরাখবর রাখছেন।

IMG 20240131 213523

তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি’র অবনতি ঘটলে বিপদজনক এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হবে। এছাড়া অত্র এলাকায় বসবাসকারীদের আতংকিত না হয়ে সজাগ থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।
এসময় আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত, তাই প্রয়োজন পড়লে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে পরীক্ষা কেন্দ্র এ বিষয়ে যোগ করেন তিনি।
জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে, সেই সাথে আমাদের পুলিশি ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা পুলিশি ব্যবস্থাকে আরো জোরদার ও ঢেলে সাজিয়েছি। তাছাড়া মায়ানমার বর্ডার এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আমজাদ হোসেন, সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট রাজেস কুমার বিশ্বাস, নাইক্ষ্যংছড়ি নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাকারিয়া, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ত্রিরতন চাকমা, ঘুমধুম তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মাহাফুজুর রহমান সহ জনপ্রতিনিধিরা ।

এদিকে বুধবার ৩১ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মর্টারশেল বাংলাদেশের ভেতরে এসে পড়ে। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ।

তিনি জানান, দুপরের দিকে মর্টারশেল পড়ে বিকট শব্দ হলে এলাকা মানুষ আতংকে এদিক সেদিক ছুটাছুটি শুরু করতে থাকে। এই ভয়ে সীমান্তের মানুষ কোন কাজ কর্ম না করে খুবই আতংকে দিনাতিপাত করছে বলে যোগ করেন তিনি।

IMG 20240131 213555

ভাজাবনিয়া সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাদার সংগঠনে সভাপতি নুরজাহান বেগম জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাদের পার্শ্ববর্তী সীমান্তের ওপারে কয়েকদিন পরপর গোলাগুলির ও ভারি গোলার শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠে। কোন সময় গোলাগুলি শুরু হয় তা বলা মুষ্কিল। এই পরিস্থিতি ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে খুবই ভয় লাগে।
তুমব্রু কোনার পাড়া এলাকার বাসিন্দা আবু সিদ্দিক জানান, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও আরাকান বাহিনীর মধ্যে চলমান বন্দুক যুদ্ধে প্রায় ভারী গোলা বিষ্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠে। মধ্যরাতে গোলাগুলি শুরু হলে ভয়ে কাঁচা ঘরের বাসিন্দারা পাড়ার বা কাছাকাছি পাঁকা দালানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। গত কাল রাতে যখন আবারও গোলা গুলি শুরু হয়েছিল তখন অন্যের ঘরে আশ্রয় না পেয়ে সীমান্ত সড়কের ওপারে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন।

উল্লেখ্য যে, মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির (এএ) সংঘর্ষ শুরু হয় দেড় বছর আগে। ২০২২ সালে জুলাই থেকে শুরু হয়ে টানা ছয়মাস যুদ্ধ চলে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী বাহিনীর মধ্যে। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে আবারো সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।