নিজস্ব প্রতিবেদক, লংগদুঃ
দেশের সর্ববৃহৎ জেলা রাঙ্গামাটির দূর্গম বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকের ইউনিয়নের প্রত্যন্ত লংথিয়ান পাড়ায় টানা ২৬ ঘন্টা পায়ে হেটে প্রথমবারের পৌঁছানো হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের ত্রানের শীতবস্ত্র কম্বল। দুর্গম ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার অজুহাতে এর আগে কখনোই এসব এলাকায় সরকারি কোন সহায়তা পৌঁছায়নি দাবি স্থানীয়দের। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবারই প্রথম পায়ে হেটে মাথায় করে পাঠানো হয়েছে এসব কম্বল। স্থানীয় ত্রিপুরা যুবক পোটারের সাহায্যে তিন হাজার টাকা মজুরির বিনিময়ে ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রণালয়ের কম্বল পাঠানো হয়েছে সাজেকের দুর্গম জনপদ নিউথাংনাং পাড়ায়।
এ এলাকায় ৪৫ টি পরিবারের নারী, পুরুষ ও শিশু মিলে ১৯৩ সদস্যের বসবাস। তাদের একমাত্র জুমচাষের ওপর নির্ভর বলে জানা গেছে। সকলেই দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন। আধুনিক চিকিৎসা শিক্ষা ও বিশুদ্ধ পানি, স্যানিট্রেশন ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছরই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ বহু মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন সাজেকের লংথিয়ান পাড়া, নিউথাংনাং পাড়া, শিয়ালদাহ সহ দুর্গম এসব পাড়ায়।
স্থানীয় প্রশাসনের তথ্যমতে, ২০১৬ সালে ৬ জন, ২০২০ সালে ৯ জন, ২০২২ সাল ৪ জন এবং ২০২৩-২৪ সালে ৩ জন নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হামসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এর পরেও কেবলমাত্র সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এখনো এসব এলাকায় একটি কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে উঠেনি। এবার পাহাড়ে শীতের প্রকোপ বেশি থাকায় পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় বসবাস করা বাসিন্দারা পড়েছেন বেকায়দায়। গত তিনদিন আগে (৮ জানুয়ারি) এমনই শীতে কাতর এক ত্রিপুরা শিশুর ভিডিও প্রতিবেদকের হাতে আসলে বিষয়টি নিয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তারের সাথে কথা বলে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তিনি তড়িৎ গতিতে করণীয় ঠিক করে এসব অসহায় মানুষের জন্য ১০০টি কম্বল পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কম্বল সরবরাহ করে স্থানীয় সাংবাদিক ওমর ফারুক সুমন। তাৎক্ষণিক ভাবে এসব কম্বল প্রথমে মোটরসাইকেল যোগে সাজেকের মাচালং ৯ নম্বর পাড়ায়, পরে সেখান থেকে স্থানীয় ইউপি সদস্য মন্টু কুমার ত্রিপুরা ও তার ছেলে নলেন কান্তি ত্রিপুরার সাহায্যে পোটারের কাঁধে করে হেটে পৌঁছানো হয় দুর্গম সীমান্ত লাগোয়া নিউথাংনাং পাড়ায়।
নলেন কান্তি ত্রিপুরা বলেন, নিউথাংনাং পাড়া ও আশপাশের এলাকায় আরো ৪-৫ পরিবার আছে তাদের জন্য আরো শীতবস্ত্র কম্বল প্রয়োজন। সহযোগিতার জন্য তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ বিষয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিবেদককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি জেনেছি সাজেকে এমন আরো ৮-১০ টি দুর্গম গ্রাম রয়েছে যেখানে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় সরকারি সহায়তা ঠিক মতো পৌঁছায় না। তাই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলবো এবং প্রতিটি পাড়ায় যেন সরকারি সহায়তা পৌঁছায় সেই ব্যবস্থা নিবো। দুর্গম এসব পাড়ার অবহেলিত শীতার্তরা কম্বল হাতে পেয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তারের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।