রুপম চাকমা, বাঘাইছড়িঃ
খাগড়াছড়ির দিঘীনালা উপজেলায় ২০২২ সালের জনশুমারী অনুয়ায়ী মোট জনসংখ্যা ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৪ শত ৩৬ জন মানুষের একমা মাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তাছাড়া পর্যটন এলাকা সাজেক ইউনিয়নের কোন ধরনে দূর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত চিকিৎসা সেবা দিতে হয় দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ দীর্ঘ ৫ বছরেও শেষ হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছরের হলেও একাধিক বার সময় বাড়িয়ে নিলেও এখন পর্যন্ত সমাপ্ত হয়নি দীঘিনালা উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, উপজেলার উন্নত স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে পূর্বের ১০ শয্যা থেকে বাড়িয়ে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহন করে সরকার। প্রকল্পটির কাজ করছে হেলথ ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্টের আওতাধীন মেক কনস্ট্রাকশন। খাগড়াছড়ি জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলার বৃহত্তর জনসংখ্যা বহুল উপজেলার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজের ধীর গতিতে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এদিকে প্রচন্ড শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন রোগীর চাপ বাড়ায় শয্যা সংকটে পড়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির নির্মাণ কাজের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলে একাধিকবার সময় বাড়িয়ে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২ বছরের কাজ ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ করতে পারেনি। যারফলে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা এবং চিকিৎসা নিতে আসা রোগরিা। দুর্ভোগে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
এদিকে পুরনো জরাজীর্ণ টিন শেডের কুঁড়েঘরে বসে চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে চিকিৎসকদের এবং পুরনো জরাজীর্ণ শয্যা গুলোতেই রোগী ভর্তি করানো হচ্ছে। শয্যা সংকটের কারণে শীতের মধ্যে জরাজীর্ণ ঘরের ফ্লোরে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে সেবা নিতে আসা রোগীরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই।
দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তনয় তালুকদার বলেন, একাধিক বার সময় বাড়িয়ে নেওয়ার পরও শেষ করতে পারেনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ। শয্যা স্বল্পতা নিয়ে ভাঙ্গা টিনের ঘরে অতিরিক্ত রোগীর চাপ থাকায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে। আগামী বর্ষাকালের আগে নতুন ভবনে চালু না হলে সমস্যা হতে পারে। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন ভবন কাজটি দ্রুত শেষ হলে মানসম্মত সেবা পাবে উপজেলার জনসাধারনেরা।
দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো: কাশেম বলেন, আওয়ামীলীগ সরকারের সবচেয়ে অবদান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোকে ৫০শয্যায় উন্নত করায়। দীঘিনালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর কাজ প্রায় শেষ এখন শুধু হস্তান্তর অপেক্ষায়। আগামী বর্ষাকালের আগে নতুন ভবনটি চালু করা দরকার।
আন্ত-বিভাগে ভর্তি রোগী আয়ুশ্রী চাকমা মা অভিতা চাকমা বলেন, আমার ১৭ মাসের মেয়েকে নিয়ে হাসপালে ভর্তি হয়েছি পুরাতন হাসপাতালের জানালা দরজা ভাংগা, টয়লেট অবস্থা বেশি খারাপ দূর্গন্ধ। নতুন হাসপাতাল ভবনটি চালু হলে খুব ভালো হতো।
আন্ত-বিভাগের আরেক রোগী মুন্নি শীল বলেন, নতুন ভবনে জন্য ভাঙ্গাঘরে রোগীর বেড মাত্র পাঁচটি মেঝেতে আর বারান্দায় বিছানা করে দেয় গাদাগাদি করে থাকতে হয়। টিনের শেড জানালা দরজা নষ্ট হয়ে গেছে, শীতে অনেক কষ্ট হয় আর বর্ষাকালে টিনের শেড দিয়ে পানি পরে। তাড়াতাড়ি নতুন হাসপাতালটি চালু করার দাবি জানান।
এদিকে প্রকল্পটির তত্ত্বাবধায়ক মেহেদী হাসান বলেন, নির্মাণাধীন ৫০শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রকল্প হলেও করোনাকালীন দীর্ঘ ছয় মাস কাজ বন্ধ থাকায় হঠাৎ নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়াসহ নানা জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যায়নি। নানা জটিলতায় নির্মাণ কাজ ধীরগতি হলেও, আগামী জুন মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক মোঃ মেহেদী হাসান।