নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবানঃ
বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় মারাইংতং জাদীর বাণিজ্যিকীকরণের অপচেষ্টা এবং বুদ্ধ মূর্তি ভাংচুরের ঘটনায় স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। রবিবার (২৫শে মে) দুই শতাধিক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ উপজেলা পরিষদ সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন এবং পরে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।
স্মারকলিপিতে এই ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা অভিযোগ করেন, লামা উপজেলার শিক্ষক উথোয়াই মার্মা জয় ও ব্যবসায়ী অক্সাস মামুন সাঙ্গু মৌজার হেডম্যানকে প্রভাবিত করে মারাইংতং জাদীর জমি দখল করে সেখানে বাণিজ্যিক রিসোর্ট তৈরির চেষ্টা করছেন। এর ফলস্বরূপ, জাদীর পবিত্রতা নষ্টের পাশাপাশি গত ২১শে মে একটি নির্মাণাধীন বুদ্ধ মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে, যা স্থানীয়দের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে।
স্মারকলিপিতে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বেশ কিছু আইনি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১ অনুযায়ী প্রথা বহির্ভূত ভূমি দখলের চেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা আইনত দন্ডনীয়। এছাড়াও, পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি, ১৯০০ অনুযায়ী হেডম্যানের দায়িত্ব রাজস্ব আদায় ও প্রশাসনিক কাজ দেখাশোনা করা, ব্যক্তিগতভাবে সরকারি বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জমি দখলের অধিকার তার নেই বলে উল্লেখ করা হয়। স্মারকলিপিতে বাংলাদেশের দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪৪৭ ধারা অনুযায়ী অনধিকার প্রবেশ এবং উপাসনালয়ে হামলার বিষয়টিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মানববন্ধন ও স্মারকলিপিতে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসকের কাছে নিম্নলিখিত আইনি পদক্ষেপ সহ অন্যান্য দাবি জানান:
• মারাইংতং জাদীর আশেপাশে সমস্ত অননুমোদিত বাণিজ্যিক কার্যকলাপ অবিলম্বে বন্ধ করা।
• জাদীর পবিত্রতা ও পরিবেশ রক্ষায় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা।
• মূর্তি ভাঙচুর ও বাণিজ্যিকীকরণের চেষ্টায় জড়িত উথোয়াই মার্মা জয়, অক্সাস মামুন ও হেডম্যান চংপাত ম্রোর বিরুদ্ধে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
প্রধান অভিযুক্ত চংপাত ম্রো ও তার সহযোগীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা এবং তাদের অপপ্রচার বন্ধ করা। শিক্ষক উথোয়াই মার্মা ও হেডম্যান চংপাত ম্রোকে তাদের সরকারি পদ থেকে বরখাস্ত করা।
স্মারকলিপিতে মারাইংতং জাদীর প্রতিষ্ঠাতা উ উইচারা ভিক্ষুসহ বহু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী স্বাক্ষর করেন। তাঁরা আশা প্রকাশ করেন, জেলা প্রশাসন বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে দ্রুত আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন
মন্তব্য করুন