উচ্চপ্রু মারমা, রাজস্থলী প্রতিনিধিঃ
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলা সাংগ্রাইং উৎসবের মৈত্রী পানিবর্ষণ অনুষ্ঠিত হলো,এই জলকেলি উৎসবে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে উদ্যাপিত হলো মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই, যা জলকেলি উৎসব নামেও পরিচিত।
সাংগ্রাই জলোৎসবের মধ্যে দিয়ে ১৬ এপ্রিল বুধবার শেষ হলো পাহাড়ের প্রধান অনুষ্ঠান সাংগ্রাই মহা উৎসব।, এদিন জলকেলিতে মেতে উঠে মারমা জনগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা। একে অপরের গায়ে পানি নিক্ষেপের মাধ্যমে পুরোনো বছরের সব জীর্ণতাগ্লানি ধুয়ে মুছে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার এই রীতিকে সাংগ্রাই জলোৎসব বলা হয়। মারমা সংস্কৃতি ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিকাশের লক্ষ্যে প্রতি বছর এই আয়োজন করা হয়।
একে জলকেলি বা জল উৎসবও বলা হয়। নানা বয়সের কয়েক হাজার মানুষ এই পানিবর্ষণে অংশ নেন। মাঠে দুই সারিতে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একদল তরুণ-তরুণী পরস্পরের দিকে পানি ছিটান। পরে বাকি সবাইও তাতে যোগ দেন। পানির বোতল কিংবা ওয়াটার গান—হাতের কাছে যা পান, তা দিয়েই ভেজান একে অপরকে। শহরজুড়ে চলেছে পানি খেলা। শিশু থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী এমনকি বয়স্ক মানুষেরাও একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেন। আনন্দ-উদ্দীপনা আর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে বর্ণিল হয়ে ওঠে
পাহাড়ে আদিবাসী মানুষ পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের মাধ্যমে তাদের সামাজিক উৎসব বিজু, বিষু, বিহু, বৈসু, সাংগ্রাই ,সাংক্রাণ পালন করে। প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর আলাদা আলাদা নামে উদযাপিত এই অনুষ্ঠানকে এক্ষেত্রে বৈসাবি হিসেবে ডাকা হয়। যার মাধ্যমে সব জনগোষ্ঠীর ঐক্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। গত ১৪ এপ্রিল থেকে পাঁচ দিনব্যাপী বৈসাবি উৎসবের মাধ্যমে এই আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সংগঠনের নানান বর্ণিল আয়োজন এবং বাড়িতে বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ শেষে আজ মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাঁই জলোৎসবের মাধ্যমে শেষ হয়েছে এই বছরের বৈসাবির আনুষ্ঠিকতা।
রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কেন্দ্রীয় মারমা সংস্কৃতি সংস্থার (মাসস) আয়োজনে জলোৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে মারমা জনগোষ্ঠী জলোৎসবে অংশ নেয়। দুই পাশে পানিভর্তি ড্রামের পাশে তরুণ-তরুণীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। বাঁশি বাজানোর পরপরই শুরু হয় একে-অপরের গায়ে পানি নিক্ষেপ। পানি নিক্ষেপের ফলে অতীতের সব গ্লানি-দুঃখ-হতাশাকে বিদায় জানিয়ে সুন্দর পরিশুদ্ধ হৃদয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয়। এ সময় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বর্ণিল সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা পরিবেশন করা হয়। এমন আয়োজনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তরুণ-তরুণীরা।
জল উৎসব অনুষ্ঠানে সাংগ্রাইং উদযাপন কমিটির সভাপতি মংসুইপ্রুু মারমার সভাপতিত্বে , বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন,লেঃ কর্ণেল মাহাতাব খান পিএসসি ডেট কমান্ডার, শাখা এ.এস.ইউ, রাঙ্গামাটি,লেঃ কর্ণেল কাওসার মেহেদী সিগন্যালস্ জোন কমান্ডার, ওয়াগ্গাছড়া জোন,লেঃ কর্ণেল মুহাম্মদ জুনাঈদ উদ্দীন শাহ চৌধুরী এসইউপি, পিএসসি, জোন কমান্ডার, রাঙ্গামাটি জোন,লেঃ কর্ণেল এসএম মাহমুদুল হাসান সোহাগ পিএসসি জোন কমান্ডার, কাপ্তাই জোন,মেজর মোঃ আসফিকুর রহমান জিএসও-২ (ইন্ট) রাঙ্গামাটি রিজিয়ন,রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা,ড. এসএম ফরহাদ হোসেন পুলিশ সুপার, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ,নাইউ মারমা সদস্য রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ,ক্যসুইথুই চৌধুরী হেডম্যান ৩২০নং কাকরাছড়ি মৌজা,
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাংগ্রই জল উৎসব উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ইউপি চেয়ারম্যান আদোমং মারমা , ও মাসস এর সদস্য সচিব উবাসিং মারমা ।
আলোচনা সভা শেষে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী মং বাজিয়ে জল উৎসব উদ্বোধন করেন অতিথিরা। পরে অতিথিরা জল ছিটিয়ে সাংগ্রাই জল উৎসবের উদ্বোধন করেন।
মন্তব্য করুন