থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধিঃ
গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় বান্দরবানের থানচিতে বলিপাড়া ইউনিয়নের প্রকল্পের অনুমোদনে মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো কোনো ওয়ার্ডে কাজ এখনো শুরু করা হয়নি। যেখানে প্রকল্পের কাজ করার কথা সেখানেই নেই কাজের অস্তিত্ব! কাজ না করেই অর্ধকোটি টাকার প্রকল্পের নয়ছয় করে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে থানচি উপজেলার বলিপাড়া ইউনিয়নের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি আওতায় ১ম ও ২য় কিস্তি নগদ অর্থ দ্বারা বাস্তবায়িত প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এই চলতি প্রকল্পের বলিবাজার জামে মসজিদের পূর্ব দক্ষিণে রাস্তার পার্শ্বে পাকা ওয়াল নির্মাণ (কাবিটা প্রকল্প নং- ৬৫) প্রকল্প কাগজে কলমে কাজ চলমান থাকলেও বাস্তবে কোন কাজ করা হয়নি এখনো। হিন্দু পাড়ায় পাড়াবাসীদের পানি ব্যবহারের সুবিধার্থে পুকুর পুনঃখনন (কাবিখা প্রকল্প নং- ৪২) প্রকল্পের কাজ এখনো দৃশ্যমান নাই।
অন্যদিকে, ওই একই অর্থবছরে কাবিখা গম দ্বারা বাস্তবায়িত ১৪ নম্বর প্রকল্পের মেইন রোড হইতে মাংগই ঝিড়ির রাস্তা পুনঃনির্মাণ, সতিচন্দ্র পাড়া পানি লাইন উন্নয়ন, ক্র্যংক্ষ্যং পাড়া হইতে বিদ্যুৎ লাইনের রাস্তা, কংজৈ পাড়া হইতে ক্র্যংক্ষ্যং পাড়া যাওয়ার রাস্তা, ক্যচু পাড়া হইতে সুথানং পাড়া যাওয়ার রাস্তা চলতি প্রকল্পের কাগজের কলমে থাকলেও এখনো কাজ শুরু না করেই অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করার হচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বলিবাজার জামে মসজিদের পূর্ব দক্ষিণে রাস্তার পার্শ্বে পাকা ওয়াল নির্মাণ প্রকল্পটির কাগজের কলমে উল্লেখ করা থাকলেও বাস্তবে কোন পাকা ওয়াল নির্মাণ কাজ দেখা যায়নি এবং কোন কাজ করা হয় নাই। হিন্দু পাড়ায় পাড়াবাসীদের পানি ব্যবহারের সুবিধার্থে পুকুর পুনঃখনন প্রকল্পের কাজের কোন অস্তিত্বই নেই। মেইন রোড হইতে মাংগই ঝিড়ির রাস্তা পুনঃনির্মাণ প্রকল্পের কাজটিও দেখতে পাইনি। সতিচন্দ্র পাড়া পানি লাইন উন্নয়ন, ক্র্যংক্ষ্যং পাড়া হইতে বিদ্যুৎ লাইনের রাস্তা, কংজৈ পাড়া হইতে ক্র্যংক্ষ্যং পাড়া যাওয়ার রাস্তা, ক্যচু পাড়া হইতে সুথানং পাড়া যাওয়ার রাস্তা এবং টিআর প্রকল্পের ক্যচু পাড়া শ্মাশনের প্রার্থনাঘর উন্নয়ন কাজ এখনো শুরু করা হয়নি।
এদিকে বলিবাজার জামে মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ বোরহান উদ্দিন বলেন, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের বলিবাজার জামে মসজিদ এলাকায় পাকা ওয়াল নির্মাণ হয়েছে বলে আমার চোখে পড়েনি এবং জানা নেই। তবে মসজিদের নিজস্ব অর্থায়নে মাদ্রাসা উন্নয়নের কাজ চলমান আছে।
বলিবাজার ব্যবসায়ী মোঃ আবুল কালাম ও মোঃ আরমান বলেন, বলিবাজার জামে মসজিদের পাকা ওয়াল নির্মাণ হয়েছিল গত ২/৩ বছর আগে এরপরে আমার জানামতে কোন পাকা ওয়াল নির্মাণ কাজ করা হয়নি, এই অর্থবছরে এখনো দেখিনি। ইদানিং মসজিদের কোন প্রকল্পের কাজ করা হয়নি। মসজিদের নিজস্ব অর্থায়নে ও বিজিবি অনুদানের মাধ্যমে মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। এখানে প্রকল্পের কাজ চলছে বলে আমার জানা নেই।
হিন্দু পাড়ার বাসিন্দা ডালিম ঘোষ ও নিমাই কর্মকার বলেন, হিন্দু পাড়ায় পাড়াবাসীদের পানি ব্যবহারের সুবিধার্থে পুকুর পুনঃখনন কাজ দেখিনি। আমাদের পাড়ায় পাড়াবাসীদের জন্য একটি পুকুর দরকার ছিল। কিন্তু পাড়ায় ব্যক্তিগতভাবে একজনের পুকুর ছাড়া পাড়ায় কোন পুকুর ছিল না।
অন্যদিকে বলিপাড়া ইউনিয়নের আরো বিভিন্ন এলাকায় ২৪-২৫ অর্থ বছরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়নি! এমনকি কাজ না করে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও স্থানীয়দের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তির সাংবাদিকদের জানান।
এই নিয়ে এলাকার সচেতন মহল স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকারের প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। অভিযুক্ত তালিকাভুক্ত প্রকল্পটির সরেজমিনে তদন্ত করে প্রকল্প বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ও সচেতনমহল।
প্রকল্পের বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে বলিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াঅং মারমা বলেন, এই প্রকল্পের কাজগুলো মেম্বার ও মহিলা মেম্বারদের নামে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিজেই বাস্তবায়নের কাজ করছেন। এর চেয়ে বেশি আমি বলতে পারবো না।
এই নিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ মসফিকুর রহমান বলেন, প্রকল্পের কাজ না করে থাকলে কাজ করার এখনও সময় আছে। কাজ না করলে বিল দেয়া হবে না। কাজ না হলে প্রয়োজনে ঐ প্রকল্প ফেরত যাবে। আমি যতদিন থাকবো কাজ না করে কেউই বিল নিতে পারবে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-ফয়সাল বলেন, কোন প্রকার প্রকল্পের কাজ না করে থাকতে পারবে না, আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখবো। এখনও যদি প্রকল্প কাজ শুরু না করে থাকলে কাজ করার সুযোগ রয়েছে, কাজ করতেই হবে। প্রকল্প কাজ না করে অর্থ আত্মসাতের কোন সুযোগ নেই।
মন্তব্য করুন