রিপন মারমা, কাপ্তাইঃ
রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন রেশম বাগান তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া গ্রামে ২০ শতক জমিতে প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী চাষ করে কাঙ্কিত ফলন পেয়ে খুশি কৃষক আমীর হোসেনের।
উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় ১২০ বিঘা জমিতে সর্যমুখী চাষ করেছেন শতাধিক কৃষক। দিন দিন বাড়ছে এর চাহিদা। কৃষি বিভাগ মনে করছে, সূর্যমুখী চাষে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি পূরণ হবে তেলের চাহিদা।
উপজেলা মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী। কম সময় ও অর্থ ব্যয় করে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাধারণ কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্ধুদ্ব করতে উদ্যমী কৃষকের হাত ধরে পরীক্ষামূলক ভাবে কাপ্তাই উপজেলার ১২০ বিঘা জমিতে দ্বিতীয় বারে মতো উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার ও বীজ প্রণোদনার মাধ্যমে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের।
বর্তমানে সূর্যমুখী ফুলের সমারোহে মেতে উঠেছে উপজেলার মাঠগুলো। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন। তেল জাতীয় অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখীর চাষ অনেক সহজলভ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকেরা এতে উৎসাহিত হয়ে উঠবেন বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
সুর্যমুখী কৃষক আমীর হোসেন বলেন, গত বছরে কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন জমিতে কৃষকরা সূর্যমুখীর চাষ করেছে দেখে অনেক ভালো লেগেছে। কিন্তু এবছরে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আমি নিজে সূর্যমুখীর চাষ করে সফলতা পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, সূর্যমুখী সরিষার থেকে তিনগুণ-চারগুণ বেশি লাভ হয় এটার চাহিদা ও দাম অনেক বেশি। আমারও ইচ্ছে আছে আগামী বছর নিজ উদ্যোগে সূর্যমুখীর চাষ করার। সরকারি ভাবে যদি কৃষকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করে তহালে সূর্যমুখীর আবাদ আরও বাড়বে।
উপজেলা চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের রেশম বাগান তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া গ্রামে সূর্যমুখী চাষ করা জমিতে গিয়ে দেখা যায়, ফুটে থাকা হলুদ সূর্যমুখী ফুলের সমাহারে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। চারিদিকে হলুদ রঙের ফুলের মনমাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছিরা ছুটছেন এক ফুল থেকে অন্য ফুলে তাতে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের জমি। এটি যেন ফসলি জমি নয়, এ এক দৃষ্টিনন্দন বাগান। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকনে শুধু প্রকৃতি প্রেমীই নয় বরং যে কারো হৃদয় বাড়বে ফুলের সৌন্দর্য দেখতে বাগানে আসছেন দর্শনার্থীরা। তবে সূর্যমুখী ফুল চাষের লক্ষ্য নিছক বিনোদন নয়। মূলত ভোজ্যতেল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে এ চাষ করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) মো: ইমরান আহমেদ জানান, সূর্যমুখীর চাষাবাদ উপজেলা মোট ৫ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক জন কৃষক ১২০ বিঘা জমিতে প্রণোদনার প্রকল্পের আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে কৃষকরা কাবেরী চ্যাম্প (হাইব্রিড) ও টাটা সানফ্লাওয়ার সিডস (হাইব্রিড) জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা শুরু করেছেন।
সূর্যমুখী এক দিকে মনোমুগ্ধকর ফুল অন্যদিকে লাভজনক ফসল। কৃষকদের বিস্তারিত জানিয়ে সূর্যমুখী আবাদ করার পরিকল্পনা করি। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯০-১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুবার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। প্রতি একর জমিতে ২০-২২ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৬০-৬৫ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
তিনি আরও বলেন, এ উপজেলায় দ্বিতীয় বারের মতো সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। আগামীতে সূর্যমুখীর চাষ করবে কৃষকরা। সূর্যমুখীর বীজ থেকে যে তেল উৎপন্ন হয় তা স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসম্পন্ন। অলিভ ওয়েলের পরেই সূর্যমুখী তেলের অবস্থান। সয়াবিন ও সরিষা ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ করবে সূর্যমুখী তেল। বেশি লাভজনক ফসল সূর্যমুখী আশা করছি ভালো ফলন হবে। আগামীতে এই উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ ব্যাপক হারে আরও সম্প্রসারিত হবে। দ্বিতীয় বারের কৃষকেরা সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হবেন বলে আমি আশাবাদী। কৃষকদের এসব তেল প্রক্রিয়াজাত এবং বাজারজাত করার ক্ষেত্রেও কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।