Dhaka , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাঙামাটিতে কাপ্তাই হ্রদের জলে ফুল ভাসানো বৈসাবির আনুষ্ঠানিক শুভ সূচনা

print news

 

রিপন ওঝা, রাঙামাটি থেকে ফিরেঃ

 

নতুন বছরে পরিবারের সদস্যদের সুখ শান্তি কামনায় গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের জলে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে পাহাড়ের নৃ-গোষ্ঠীদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবির তিন দিনের আনুষ্ঠানিক শুভ সূচনা হয়।

 

রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ দীপংকর তালুকদার ও সহধর্মিণী ও বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, সদস্য মাচাং বিপুল ত্রিপুরা, মাচাং ঝিনুক ত্রিপুরা ও সহধর্মিণী উপস্থিত ছিলেন।

434528256 1121743255642678 4523791508805025119 n

পাহাড়ের বসবাসরত নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরা নবর্বষের পুরো আয়োজনকে জাতিগোষ্ঠী ভেদে বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, সাংক্রান ও বিহু নামে পরিচয় দেয়। আর এই উৎসবের মূল অনুষ্ঠানের তিনদিন ফুল বিজু, মূল বিজু ও গজ্জ্যাপজ্জ্যা বা নবর্বষ হিসেবে পরিচিত।

 

ফুল বিঝু পালন করা হয় চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন ১২ এপ্রিল (আজ)। সকালের সূর্য পুর্ব আকাশে উদয়ের পর পরই বন থেকে নানা বাহারি ফুল তুলে এনে পরিবারের সদস্যদের সুখ শান্তি কামনায় গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে নদীর জলে ভাসিয়ে দেন পার্বত্যঞ্চলে বসবাসরত আধিবাসীরা। এর পরই সংঘবদ্ধভাবে আয়োজন করা হয়েছে গ্রামের গুরুজন বয়োবৃদ্ধদের পা ধোয়ানো ও স্নান করানোর মাধ্যমে আশির্বাদ নেওয়া। পাশাপাশি পরিবেশন করা হয় নিজেদের ঐতিহ্যের নাচ-গান। এদিন ফুল ও নিমপাতা দিয়ে সাজানো হয় পাহাড়ের সকল জনগোষ্ঠীর প্রতিটি ঘর।

434600531 1815185078908223 6783378948429415481 n 1

অপরদিকে রাঙামাটির বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, সাংক্রান, বিহু উদযাপন পরিষদ গর্জনতলীর পূর্বদিকে ভেসে ওঠা চড়ে এলাকায় আয়োজন করেছে ফুল ভাসানো অনুষ্ঠানের। এছাড়াও কাপ্তাই হ্রদে বিভিন্ন স্থান থেকে ফুল ভাসানো হয়। অনুষ্ঠানের শেষ দিন বা পহেলা বৈশাখ পাহাড়ি এই জনপদে গজ্জ্যাপজ্জ্যা বা নবর্বষ নামে পরিচিত। এদিন সকালে স্নান শেষে নতুন কাপড় পরিধান করে পরিবারের গুরুজনদের পা ধরে নমষ্কার করার মাধ্যমে আর্শীবাদ নিয়ে নতুন বছরের কার্যক্রম শুরু করে পাহাড়ের নৃ-গোষ্ঠী মানুষেরা। এদিনও অতিথিদের আপায়নে নানা খাবারের আয়োজন থাকে পরিবারগুলোতে। ফুল বিঝু, মূল বিজু ও গজ্জ্যাপজ্জ্যা’র এইদিনগুলোতে এসব অনুষ্ঠানের পাশাপাশি প্রতিদিনই গ্রামে গ্রামে আয়োজন করা হয় নানা খেলাধুলার। বয়স ভেদে ভিন্ন ভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করেন তারা। এসব খেলাধুলার মধ্যে বলি খেলা, ঘিলা খেলা, নাদেং খেলা অন্যতম। এছাড়াও প্রতিদিন নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় গ্রামে গ্রামে। আর এক গ্রামে লোক অন্য গ্রামে কিংবা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে নেয় আতিথেয়তার স্বাদ।

 

এ বিষয়ে পাহাড়ি তরুন অয়ন ত্রিপুরা শুভ বলেন, পুরোনো বছরের সকল গ্লানিকে পিছনে ফেলে নতুন বছরে সুখ শান্তি কামনায় ফুল বিজুতে আমরা দেবী গঙ্গার উদ্দেশ্যে নদীতে ফুল ভাসাতে এসেছি। পরে গ্রামের বয়োবৃদ্ধ বা গুরুজনদের স্নান করানো,পা ধোয়ানো, নতুন বস্ত্র প্রদান এবং পিঠা খাওয়ানোর মধ্যদিয়ে আশির্বাদ নেওয়ার অনুষ্ঠানে অংশ নেব। এছাড়াও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আমরা আজকে ফুল নিমপাতা দিয়ে ঘর সাজাবো। উৎসবের দ্বিতীয় দিন মূল বৈসুক অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তির দিন ১৩ এপ্রিল শনিবার হচ্ছে বৈসাবির আতিথেয়তার দিন। এদিন আতিথেয়তার প্রধান উপকরণ পাজন (হরেক রকমের সবজি দিয়ে রান্না করা তরকারি)। এদিন প্রতিটি পরিবারেই পাজন রান্নার ধুম পড়ে। এই পাজন রান্নায় কম করে হলেও ৫০ থেকে ৮০ প্রকার সবজি ব্যবহার করতে শোনা যায়। এসবের মধ্যে রয়েছে কাঁঠাল, তাঁরা, বেতের আগা, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, শিম, পাহাড়ি নানা জাতের কচু, বাহারি শাকসহ বিভিন্ন পাহাড়ি তরকারি। ক্ষেত্র বিশেষে অনেকেই এই পাজনে নানা রকমের শুটকিও ব্যবহার করে থাকেন। তবে যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে এদিন আতিথেয়তায় পাজনের পাশাপাশি সেমাই, নুডুলসের মতো বাহারি খাবারের আয়োজনও করে অনেক পাহাড়ি পরিবার।

 

রাঙামাটি বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, সাংক্রান, বিহু উদযাপন পরিষদ বৈসাবি উপলক্ষে ফুল বিজুতে জেলা শহরের রাজবন বিহার পূর্বঘাটে ফুল ভাসানো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এছাড়াও জেলা শহরসহ সকল গ্রামে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে অনুষ্ঠানকে ঘিরে। তবে মূল অনুষ্ঠান তিন দিনের হলেও ১৬ এপ্রিল মারমা জাতিগোষ্ঠীর জল উৎসবের মধ্যে দিয়ে রাঙামাটিতে শেষ হবে বৈসাবির শেষ আনুষ্ঠানিকতা। রাঙামাটি শহরের গর্জনতলী এলাকায় ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশন নিজ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন রাঙামাটি ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মাচাং বিদ্যুৎ শংকর ত্রিপুরা।

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

জনপ্রিয়

মানিকছড়ি সদর ইউনিয়নে কৃষক সমাবেশ

রাঙামাটিতে কাপ্তাই হ্রদের জলে ফুল ভাসানো বৈসাবির আনুষ্ঠানিক শুভ সূচনা

প্রকাশিত: ০৩:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০২৪
print news

 

রিপন ওঝা, রাঙামাটি থেকে ফিরেঃ

 

নতুন বছরে পরিবারের সদস্যদের সুখ শান্তি কামনায় গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের জলে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে পাহাড়ের নৃ-গোষ্ঠীদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবির তিন দিনের আনুষ্ঠানিক শুভ সূচনা হয়।

 

রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ দীপংকর তালুকদার ও সহধর্মিণী ও বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, সদস্য মাচাং বিপুল ত্রিপুরা, মাচাং ঝিনুক ত্রিপুরা ও সহধর্মিণী উপস্থিত ছিলেন।

434528256 1121743255642678 4523791508805025119 n

পাহাড়ের বসবাসরত নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরা নবর্বষের পুরো আয়োজনকে জাতিগোষ্ঠী ভেদে বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, সাংক্রান ও বিহু নামে পরিচয় দেয়। আর এই উৎসবের মূল অনুষ্ঠানের তিনদিন ফুল বিজু, মূল বিজু ও গজ্জ্যাপজ্জ্যা বা নবর্বষ হিসেবে পরিচিত।

 

ফুল বিঝু পালন করা হয় চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন ১২ এপ্রিল (আজ)। সকালের সূর্য পুর্ব আকাশে উদয়ের পর পরই বন থেকে নানা বাহারি ফুল তুলে এনে পরিবারের সদস্যদের সুখ শান্তি কামনায় গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে নদীর জলে ভাসিয়ে দেন পার্বত্যঞ্চলে বসবাসরত আধিবাসীরা। এর পরই সংঘবদ্ধভাবে আয়োজন করা হয়েছে গ্রামের গুরুজন বয়োবৃদ্ধদের পা ধোয়ানো ও স্নান করানোর মাধ্যমে আশির্বাদ নেওয়া। পাশাপাশি পরিবেশন করা হয় নিজেদের ঐতিহ্যের নাচ-গান। এদিন ফুল ও নিমপাতা দিয়ে সাজানো হয় পাহাড়ের সকল জনগোষ্ঠীর প্রতিটি ঘর।

434600531 1815185078908223 6783378948429415481 n 1

অপরদিকে রাঙামাটির বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, সাংক্রান, বিহু উদযাপন পরিষদ গর্জনতলীর পূর্বদিকে ভেসে ওঠা চড়ে এলাকায় আয়োজন করেছে ফুল ভাসানো অনুষ্ঠানের। এছাড়াও কাপ্তাই হ্রদে বিভিন্ন স্থান থেকে ফুল ভাসানো হয়। অনুষ্ঠানের শেষ দিন বা পহেলা বৈশাখ পাহাড়ি এই জনপদে গজ্জ্যাপজ্জ্যা বা নবর্বষ নামে পরিচিত। এদিন সকালে স্নান শেষে নতুন কাপড় পরিধান করে পরিবারের গুরুজনদের পা ধরে নমষ্কার করার মাধ্যমে আর্শীবাদ নিয়ে নতুন বছরের কার্যক্রম শুরু করে পাহাড়ের নৃ-গোষ্ঠী মানুষেরা। এদিনও অতিথিদের আপায়নে নানা খাবারের আয়োজন থাকে পরিবারগুলোতে। ফুল বিঝু, মূল বিজু ও গজ্জ্যাপজ্জ্যা’র এইদিনগুলোতে এসব অনুষ্ঠানের পাশাপাশি প্রতিদিনই গ্রামে গ্রামে আয়োজন করা হয় নানা খেলাধুলার। বয়স ভেদে ভিন্ন ভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করেন তারা। এসব খেলাধুলার মধ্যে বলি খেলা, ঘিলা খেলা, নাদেং খেলা অন্যতম। এছাড়াও প্রতিদিন নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় গ্রামে গ্রামে। আর এক গ্রামে লোক অন্য গ্রামে কিংবা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে নেয় আতিথেয়তার স্বাদ।

 

এ বিষয়ে পাহাড়ি তরুন অয়ন ত্রিপুরা শুভ বলেন, পুরোনো বছরের সকল গ্লানিকে পিছনে ফেলে নতুন বছরে সুখ শান্তি কামনায় ফুল বিজুতে আমরা দেবী গঙ্গার উদ্দেশ্যে নদীতে ফুল ভাসাতে এসেছি। পরে গ্রামের বয়োবৃদ্ধ বা গুরুজনদের স্নান করানো,পা ধোয়ানো, নতুন বস্ত্র প্রদান এবং পিঠা খাওয়ানোর মধ্যদিয়ে আশির্বাদ নেওয়ার অনুষ্ঠানে অংশ নেব। এছাড়াও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আমরা আজকে ফুল নিমপাতা দিয়ে ঘর সাজাবো। উৎসবের দ্বিতীয় দিন মূল বৈসুক অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তির দিন ১৩ এপ্রিল শনিবার হচ্ছে বৈসাবির আতিথেয়তার দিন। এদিন আতিথেয়তার প্রধান উপকরণ পাজন (হরেক রকমের সবজি দিয়ে রান্না করা তরকারি)। এদিন প্রতিটি পরিবারেই পাজন রান্নার ধুম পড়ে। এই পাজন রান্নায় কম করে হলেও ৫০ থেকে ৮০ প্রকার সবজি ব্যবহার করতে শোনা যায়। এসবের মধ্যে রয়েছে কাঁঠাল, তাঁরা, বেতের আগা, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, শিম, পাহাড়ি নানা জাতের কচু, বাহারি শাকসহ বিভিন্ন পাহাড়ি তরকারি। ক্ষেত্র বিশেষে অনেকেই এই পাজনে নানা রকমের শুটকিও ব্যবহার করে থাকেন। তবে যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে এদিন আতিথেয়তায় পাজনের পাশাপাশি সেমাই, নুডুলসের মতো বাহারি খাবারের আয়োজনও করে অনেক পাহাড়ি পরিবার।

 

রাঙামাটি বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, সাংক্রান, বিহু উদযাপন পরিষদ বৈসাবি উপলক্ষে ফুল বিজুতে জেলা শহরের রাজবন বিহার পূর্বঘাটে ফুল ভাসানো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এছাড়াও জেলা শহরসহ সকল গ্রামে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে অনুষ্ঠানকে ঘিরে। তবে মূল অনুষ্ঠান তিন দিনের হলেও ১৬ এপ্রিল মারমা জাতিগোষ্ঠীর জল উৎসবের মধ্যে দিয়ে রাঙামাটিতে শেষ হবে বৈসাবির শেষ আনুষ্ঠানিকতা। রাঙামাটি শহরের গর্জনতলী এলাকায় ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশন নিজ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন রাঙামাটি ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মাচাং বিদ্যুৎ শংকর ত্রিপুরা।