মিঠুন সাহা, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব বৈসাবি‘তে কয়েকশ বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গরয়া নৃত্য এক পরিচিত সংস্কৃতি। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম ত্রিপুরা সম্প্রদায়।
আর ত্রিপুরাদের প্রধানতম সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব বৈসুকে কেন্দ্র করেই এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের পাড়ায় পাড়ায় চলছে তাদের ঐতিহ্যবাহী ‘গরয়া নৃত্য’। বৈসুক শুরু হয় বর্ষ বরণের আগের দিন থেকে।
আর বৈসুক শুরুর এক সপ্তাহ আগেই সাধারণত গরয়া নৃত্যের দল বেরিয়ে পড়েন পাহাড়ের এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে। গরয়া নৃত্যটি ত্রিপুরাদের জনজীবনে বিজয় স্মারক হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়।
বৈসুকের অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে কমপক্ষে ১৬ জনের ত্রিপুরা নারী-পুরুষ বেরিয়ে যান পাহাড়ি পল্লীতে। প্রতিটি ঘরের উঠোনে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের গরয়া নৃত্য পরিবেশন করেন তারা।
১৩ এপ্রিল শনিবার সেই গরয়া নৃত্য দলের প্রদর্শন এর একটা চিত্র দেখা যায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি উপজেলার কুড়াদিয়া ছড়ার এলাকার হেডম্যান পাড়ায়।
ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বয়স্ক মুরুব্বীদের কাছ থেকে জানা যায়, ত্রিপুরাদের চৌদ্দ দেবতার মধ্যে গরয়া দেব একটি। আদিকাল জন্ম থেকে গরয়া নৃত্য প্রতি বছরের চৈত্র মাসের শেষ তারিখ হতে বৈশাখ মাসের প্রথম তারিখ পর্যন্ত তিনদিন তিনরাত ব্যাপী গরয়া পূজা করা হয়।পৃথিবীর বিভিন্ন রোগ,শোক, দুঃখ, জরা, ব্যাধী, বিভিন্ন ফসলের উপকারিতা, ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতি বিভিন্ন বিপদ হতে রক্ষা পেতে গরয়া পূজা করা হয়।
গরয়া পূজা প্রথম করার সময় কাথারক পূজা (সুকন্দুরায়,মুকুন্দুরায়)নামে দুই ভাইয়ের পূজা করা হয়। গরয়া নৃত্যের নৃত্য শিল্পরা বিভিন্ন পাড়ায় পাড়ায় বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে ঘুরে গরয়া নৃত্য প্রদর্শন করে থাকে এবং ত্রিপুরা সমাজের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির বিভিন্ন খেলা দেখিয়ে তিনদিন তিনরাত ব্যাপী আনন্দ উদযাপন করে থাকে।
গরয়া দেবের পূজার সাথে তুলা, চাউল, ডিম, টাকা পয়সা ইত্যাদি সামর্থ্য অনুযায়ী পূজা করা হয়। গরয়া দেবের পূজায় শেষ দিনে পুরাতন বছরের সকল দুঃখ,দুর্দশা কাটিয়ে নতুন বছরের মঙ্গল কামনায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীরা গরয়া দেবের নিকট আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।