রিপন ওঝা, মহালছড়িঃ
পার্বত্য অঞ্চলে বাসবাসরত সকল গোষ্ঠীসমূহের প্রধানতম সামাজিক উৎসব বৈসাবির আনন্দে ভাসছে পাহাড়ি জনপদ। ত্রিপুরা ও চাকমা সম্প্রদায়ের পরেই ১৪ এপ্রিল ২০২৪ রোজ শনিবার থেকে মারমাদের সাংগ্রাইং শুরু।
তারই ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে মারমা উন্নয়ন সংসদ কর্তৃক প্রতিবছরের ন্যায় আজ ১৩এপ্রিল ২০২৪ রোজ শুক্রবার মাহা সাংগ্রাই ১৩৮৬ ও বঙ্গাব্দ ১৪৩১ উপলক্ষে শিক্ষা, সংস্কৃতি, উন্নয়ন মূলমন্ত্রে “নব আনন্দে জাগে আজি নববিকিরণে শুভ্র সুন্দর প্রীতি উজ্জ্বল নির্মল জীবনে ও সুদৃঢ় হোক সম্প্রীতির বন্ধন” প্রতিপাদ্য বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে।মারমা অধ্যুষিত গ্রাম গুলোতে নিজ নিজ ঐতিহ্য ধারণ করে প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে থেকে নানা ধরনের খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, প্রায় এলাকায় পানি খেলার মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
উক্ত মঙ্গল শোভাযাত্রা উপজেলা চত্বর হতে শুরু হয়ে মহালছড়ি সরকারি কলেজ মাঠে শেষ হয় এবং মারমা গানের সাথে নৃত্য পরিবেশিত হয়। উক্ত মঙ্গল শোভাযাত্রায় মারমা উন্নয়ন সংসদ, মহালছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক “কংজরী মারমা” সঞ্চালনা করেন। উক্ত কর্মসূচীতে উপস্থিত মারমা সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথি হিসেবে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিমল কান্তি চাকমা (মূর্ত বাবু) বলেন, বৈসু, সাংগ্রাই, বিজু (বৈসাবি) ও বাংলা নববর্ষ-২০২৪ শুভেচ্ছা জানান।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আবহমান কাল ধরে লালিত ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে পালিত হয়ে আসছে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই ও বর্ষবরণ উৎসব। ত্রিপুরা সম্প্রদায় পালন করে বৈসুক, মারমা সম্প্রদায় পালন করে সাংগ্রাইং, চাকমা’ সম্প্রদায় পালন করে বিজু, তিন সম্প্রদায়ের মানুষজন নতুন বছর বরণের অনুষ্ঠানকে “বৈসাবি” বলা হয়। তাই আজ মারমা সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে নতুন বছরের স্বাগত জানিয়ে আজকের মহামিলন ঘটিয়েছে। নতুন বছরের সকল জাতিগোষ্ঠীর অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে আঁধারের পাহাড় আলোকিত হয়ে উঠুক শিক্ষার আলোর গুণে, উৎসব পরিণত হোক সবার হিতকল্যাণে” ও মারমা ভাষায় সাংগ্রাই লেথে, সাংগ্রাই লেথে এ শ্লোগানে পুরাতন বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরন করতে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রায় কর্মসূচীতে আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ জসিম উদ্দিন, মহালছড়ি ১নং সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রতন কুমার শীল, সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সুইনুপ্রু চৌধুরী গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন এবং জেএসএস (এমএন লারমা) থানা কমিটির সভাপতি নীল রঞ্জন চাকমা, মহালছড়ি বাজার চৌধুরী মংসুইপ্রু চৌধুরী, মহালছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নাসির উদ্দিন ও দশজনের অধিক পুলিশ সদস্য নিয়ে শোভাযাত্রায় মাঝে টহলরত ও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীগণ এবং সিঙ্গিনালা যুব সমাজ, খ্যাংসাপাড়া যুব সমাজ, যৌথখামার যুবসমাজ, মুড়াপাড়া একতা ক্লাব, থলিপাড়া যুবসমাজ, বাবুপাড়া যুবসমাজ, চৌংড়াছড়ি যুবসমাজ, চৌংড়াছড়ি মুখ যুবসমাজ, রামেশু কার্বারীপাড়া যুব সমাজের তরুন তরুনীগণ ও বয়োবৃদ্ধ প্রাণবন্ত উৎসাহ উদ্দীপনায় স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ করে।
সমাপনীর বক্তব্যে হ্লাশিং মং চৌধুরী বলেন দেশের সমাজ ও দেশে বসবাসরত জাতি, ধর্ম, বর্ন, গোত্র ও ভাষাভাষী মানুষের মধ্যকার ঐক্য, সংহতি ও সহযোগিতার মনোভাবই হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজন পারিবারিক সম্প্রীতি, সামাজিক সম্প্রীতি, প্রতিবেশিদের সাথে সম্প্রীতি, সাংগঠনিক সম্প্রীতি, জাতিগত সম্প্রীতি, রাজনৈতিক সম্প্রীতি, কর্মজীবনে সম্প্রতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষকরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ধর্ম যার যার উৎসব সবার।
পার্বত্য জনপদের সকল সম্প্রদায়ের প্রতি মারমা উন্নয়ন সংসদ মহালছড়ি উপজেলা শাখা পক্ষ হতে নতুন বছরের সকল জাতিগোষ্ঠীর অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি উন্নত শুভকামনা জ্ঞাপন করেন।
উক্ত মাহা সাংগ্রাই ১৩৮৬ ও বঙ্গাব্দ ১৪৩১ নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত বর্নাট্য শোভাযাত্রাটি মারমা উন্নয়ন সংসদ মহালছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি ও খাগড়াছড়ি জেলা কৃষকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ক্রা এ এ্ এগ্রো ফার্মের কর্ণধার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত হ্লাশিং মং চৌধুরীর সভাপতিত্ব করেন ও সাধারণ সম্পাদক কংজরী মারমা নেতৃত্ব দেন।