Dhaka , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লুট করা অস্ত্র ফেরত দিয়ে কেএনএফদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আহ্বানে মানববন্ধন।

print news

বান্দরবান প্রতিনিধি:

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে লুট করা ১৪টি অস্ত্র ফেরত দিয়ে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যদের অবৈধ সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন রোয়াংছড়ি উপজেলায় বসবাসরত বম জনগোষ্ঠী।

সোমবার (১০ জুন) সকাল ১০ টায় রোয়াংছড়ি বাজারে রোয়াংছড়ি সর্বস্তরের সাধারণ বম জনগোষ্ঠীর  ব্যানারে দুই শতাধিক নারী-পুরুষ  প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন।

এ সময় বক্তারা বলেন, সম্প্রতি বান্দরবানে রোয়াংছড়িতে সেনাবাহিনীর উপর হামলা, রুমা ও থানচি উপজেলায় কেএনএফে’র ব্যাংক ডাকাতি, সরকারি অস্ত্র লুট, অপহরণ ও চাঁদাবাজির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। একই সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪ টি অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করা অস্ত্র ফেরত দিয়ে কেএনএফ সদস্যদেরকে  স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আসার আহ্বান জানান।

রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নেইত পুইতিং বম তাঁর বক্তব্যে বলেন, পার্বত্য জেলা বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কেএনএফ সশস্ত্র সংগঠন কর্তৃক ব্যাংক ডাকাতি, সরকারি অস্ত্র লুট, অপহরন, চাঁদাবাজি ও সেনাবাহিনীর উপর হামলাসহ নানা রকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার সাধারণ নাগরিকদের জানমাল রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিরাপত্তার ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ দমনের লক্ষ্যে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে। আমাদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।

বান্দরবান সরকারি কলেজের ছাত্রী জেনেট বম তাঁর  বক্তব্যে বলেন, কেএনএফে’র ক্রমবর্ধমান বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে এলাকায় স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। কেএনএফের অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য সাধারণ মানুষ বিশেষ করে বম জনগোষ্ঠীর মা-বোন, বৃদ্ধ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভূক্তভোগি হতে চাই না। আজ বম জনগোষ্ঠীর  অধিকাংশ গ্রাম জনশূন্য। শতশত মানুষ দেশান্তরিত হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা বন্ধ হচ্ছে। স্বাভাবিক গৃহস্থালি কাজ, আর্থ সামাজিক, জীবন জীবিকা নির্বাহ কাজ ব্যহত হচ্ছে। এলাকায় সাধারণ মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসবের দায়ভার কেএনএফ’কে নিতে হবে। বম জনগোষ্ঠীর প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে ফলদ বাগান ও জুম চাষ। ফলদ বাগান করে শতশত পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। ফল-মূল বিক্রয় করার এই মৌসুমে কেএনএফ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ীরা বম পাড়ায় আসতে পারছেন না। শত শত একর আম,আনারস বিভিন্ন ফলদ বাগান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, কেএনএফ সংগঠনের প্রতি আমাদের অনুরোধ, যদি সমাজে শান্তি চাও, লুণ্ঠিত সরকারি অস্ত্র ফেরত দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসো। তোমাদের অযৌক্তিক ও অবান্তর দাবী বম জাতির সামাজিক অবক্ষয়, বিশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক ধ্বংস ও এলাকার ক্ষতি ছাড়া কোন সুফল বয়ে আনবে না।

মানব বন্ধনে রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নেইত পুইতিং বম এর সভাপতিত্বে মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে  আরো বক্তব্য রাখেন রোয়াংছড়ি উপজেলার ৩৪১ নং মৌজার হেডম্যান বয়থাং বম, পারখুম বম ও বান্দরবান সরকারি কলেজের ছাত্রী জেনেট বম প্রমূখ।

প্রসঙ্গত, গত ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি, ব্যাংক ব্যবস্থাপককে  অপহরণ, টাকা লুট ও পুলিশ-আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ব্যাংক ব্যবস্থাপক উদ্ধার হলেও লুট হওয়া অস্ত্র ও টাকা দুই মাসেও উদ্ধার করা যায়নি।

Tag :
জনপ্রিয়

ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের সকল হত্যার বিচার করা হবে — গাইবান্ধায় ড. শফিকুর রহমান

লুট করা অস্ত্র ফেরত দিয়ে কেএনএফদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আহ্বানে মানববন্ধন।

প্রকাশিত: ১২:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জুন ২০২৪
print news

বান্দরবান প্রতিনিধি:

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে লুট করা ১৪টি অস্ত্র ফেরত দিয়ে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যদের অবৈধ সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন রোয়াংছড়ি উপজেলায় বসবাসরত বম জনগোষ্ঠী।

সোমবার (১০ জুন) সকাল ১০ টায় রোয়াংছড়ি বাজারে রোয়াংছড়ি সর্বস্তরের সাধারণ বম জনগোষ্ঠীর  ব্যানারে দুই শতাধিক নারী-পুরুষ  প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন।

এ সময় বক্তারা বলেন, সম্প্রতি বান্দরবানে রোয়াংছড়িতে সেনাবাহিনীর উপর হামলা, রুমা ও থানচি উপজেলায় কেএনএফে’র ব্যাংক ডাকাতি, সরকারি অস্ত্র লুট, অপহরণ ও চাঁদাবাজির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। একই সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪ টি অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করা অস্ত্র ফেরত দিয়ে কেএনএফ সদস্যদেরকে  স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আসার আহ্বান জানান।

রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নেইত পুইতিং বম তাঁর বক্তব্যে বলেন, পার্বত্য জেলা বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কেএনএফ সশস্ত্র সংগঠন কর্তৃক ব্যাংক ডাকাতি, সরকারি অস্ত্র লুট, অপহরন, চাঁদাবাজি ও সেনাবাহিনীর উপর হামলাসহ নানা রকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার সাধারণ নাগরিকদের জানমাল রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিরাপত্তার ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ দমনের লক্ষ্যে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে। আমাদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।

বান্দরবান সরকারি কলেজের ছাত্রী জেনেট বম তাঁর  বক্তব্যে বলেন, কেএনএফে’র ক্রমবর্ধমান বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে এলাকায় স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। কেএনএফের অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য সাধারণ মানুষ বিশেষ করে বম জনগোষ্ঠীর মা-বোন, বৃদ্ধ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভূক্তভোগি হতে চাই না। আজ বম জনগোষ্ঠীর  অধিকাংশ গ্রাম জনশূন্য। শতশত মানুষ দেশান্তরিত হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা বন্ধ হচ্ছে। স্বাভাবিক গৃহস্থালি কাজ, আর্থ সামাজিক, জীবন জীবিকা নির্বাহ কাজ ব্যহত হচ্ছে। এলাকায় সাধারণ মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসবের দায়ভার কেএনএফ’কে নিতে হবে। বম জনগোষ্ঠীর প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে ফলদ বাগান ও জুম চাষ। ফলদ বাগান করে শতশত পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। ফল-মূল বিক্রয় করার এই মৌসুমে কেএনএফ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ীরা বম পাড়ায় আসতে পারছেন না। শত শত একর আম,আনারস বিভিন্ন ফলদ বাগান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, কেএনএফ সংগঠনের প্রতি আমাদের অনুরোধ, যদি সমাজে শান্তি চাও, লুণ্ঠিত সরকারি অস্ত্র ফেরত দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসো। তোমাদের অযৌক্তিক ও অবান্তর দাবী বম জাতির সামাজিক অবক্ষয়, বিশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক ধ্বংস ও এলাকার ক্ষতি ছাড়া কোন সুফল বয়ে আনবে না।

মানব বন্ধনে রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নেইত পুইতিং বম এর সভাপতিত্বে মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে  আরো বক্তব্য রাখেন রোয়াংছড়ি উপজেলার ৩৪১ নং মৌজার হেডম্যান বয়থাং বম, পারখুম বম ও বান্দরবান সরকারি কলেজের ছাত্রী জেনেট বম প্রমূখ।

প্রসঙ্গত, গত ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি, ব্যাংক ব্যবস্থাপককে  অপহরণ, টাকা লুট ও পুলিশ-আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ব্যাংক ব্যবস্থাপক উদ্ধার হলেও লুট হওয়া অস্ত্র ও টাকা দুই মাসেও উদ্ধার করা যায়নি।