সিএইচটি বার্তা ডেক্স রিপোর্টঃ
বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, জেলা পরিষদ শাখা, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা গত ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ইংরেজি তারিখ স্মারক নং : ৪৬, ০৪২, ০৩৩, ০০, ০০, ১৮৭, ২০১১, ১৪৪৫ মুলে এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত জেলা পরিষদের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪”-এর ধারা ৩ দ্বারা সন্নিবেশিত ৮২ (২) ধারা মোতাবেক প্রশাসক, জেলা পরিষদ-এর কর্মসম্পাদনে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার নিম্নরূপভাবে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়।
প্রশাসক, জেলা পরিষদ, সভাপতি, উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার, সংশ্লিষ্ট জেলা সদস্য, নির্বাহী প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), সংশ্লিষ্ট জেলা সদস্য, নির্বাহী প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, সংশ্লিষ্ট জেলা সদস্য, উপপরিচালক, সমাজসেবা, সংশ্লিষ্ট জেলা সদস্য, জেলা শিক্ষা অফিসার, সংশ্লিষ্ট জেলা সদস্য, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, সংশ্লিষ্ট জেলা সদস্য, উপপরিচালক, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, সংশ্লিষ্ট জেলা, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট জেলাসদস্য, নির্বাহী কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদ সদস্য, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (সকল) সদস্য, সহকারী প্রকৌশলী, সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদ সদস্য ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদ সদস্য-সচিব।
কমিটির কার্যপরিধিঃ (ক) উক্ত কমিটির সদস্যগণ জেলা পরিষদ সদস্যের ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন। (খ) জেলা পরিষদের অধিক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উক্ত কমিটির সুপারিশ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। (গ) ন্যূনতম ৫০% সদস্যের উপস্থিতিতে কোরাম গঠিত হবে; যদি কোন সভায় কোরাম না হয়, তাহলে ঐ সভার সভাপতি এরূপ সভা মূলতবী করবেন অথবা যুক্তিসংগত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে প্রয়োজনীয় কোরাম হলে সভা পরিচালনা করবেন। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে, উপসচিব মো. হাবিবুর রহমান এই আদেশে স্বাক্ষর করেন। জেলা পরিষদের সমুহে প্রশাসক নিয়োগ এর বিষয়কে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারন জনগণ। কিন্তু এখানে কতটি জেলা পরিষদ এর আওতায় পড়বে তা আদেশে বলা হয়নি। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সমুহের বিষয়ে এ আদেশে কিছু বলা হয়নি।
উল্লেখ্য, ১৮ সেপ্টেম্বর- ২০২৪ ইংরেজি তারিখে খাগড়াছড়িতে ফার্নিচার ব্যবসায়ী মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনার প্রতিবাদে ১৯ সেপ্টেম্বর-২০২৪ ইংরেজি তারিখ বিক্ষোভ মিছিল বের করে দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি লারমা স্কয়ারের দিকে যাওয়ার সময় পাহাড়ি-বাঙ্গালী সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এক পর্যায়ে লারমা স্কয়ারে দোকানপাট ও বসত বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এঘটনা প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর ও রাঙামাটিতে ছড়িয়ে পড়ে। পাহাড়ি-বাঙ্গালী সহিংসতার ঘটনায় খাগড়াছড়িতে ৩ জন ও রাঙামাটিতে একজনসহ ৪ জন নিহত হয়। ২০ সেপ্টেম্বর- ২০২৪ ইংরেজি তারিখ রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙ্গালী সহিংসতার সময় মৈত্রী বিহারে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
এঘটনার পর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সহিংসতার ঘটনা তদন্তের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরীকে কমিটির প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সহিংস ঘটনার গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। পার্বত্য অঞ্চলের পরিস্থিতি থমথমে, পরিস্থিতি মোটেও ভাল নয়। এঅবস্থায় রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সমুহে বাইরের কাউকে চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ দেয়া হলে এ নিয়োগকে কেন্দ্র করে পার্বত্য অঞ্চলের পরিস্থিতি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারনা।
গত ৫ আগষ্ট-২০২৪ স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের পতনের পর নতুন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা সারাদেশের অগ্রসর হচ্ছে, এ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পথে ছাত্র-জনতা যে এসেছে তা কিন্তু খুব সহজে হয়ে যায়নি, বৈষম্য ও কোটা বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রায় দেড় হাজার জন মানুষের প্রাণ গেছে। সংখ্যাটা যদি আমরা হিসাব করি মহান মুক্তিযুদ্ধ বাদে বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন পরিবর্তনের জন্য বা কোন সংগ্রামের জন্য এত আত্মহুতি দিতে হয়নি। বাংলাদেশে গত ১৫ বছর ধরে চরম কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করে ছিলো সেই স্বৈরাচারকে উৎখাত করার জন্য ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে নতুন একটি বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুছ এর নেতৃত্বে রাষ্ট্র সংস্কার কাজ চলছে।
এদিকে পার্বত্য অঞ্চলের কর্তৃত্ববাদী একটি মহল তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে তাদের পছন্দের লোকদের চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে বসাতে তাদের ঘরনার ছাত্র সংগঠনসহ একাধিক এনজিও প্রধান এবং আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার মাধ্যমে আন্তবর্তীকালীন সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করার তথ্য পাওয়া গেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষক এবং সাবেক সেনা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারতপন্থী পার্বত্য অঞ্চলের কর্তৃত্ববাদী মহলটির প্রস্তাবিত প্যানেল মোতাবেক তিন পার্বত্য জেলার জেলা পরিষদ সমুহে চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ না দিয়ে সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিলে কারো কোন আপত্তি থাকবেনা। আন্তবর্তীকালীন সরকার সকল বির্তর্কের উর্ধ্বে থেকে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সমুহে সারা দেশের ন্যায় প্রশাসক নিয়োগ দিলে এ সিদ্ধান্ত হবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে পাহাড়ি-বাঙ্গালী উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে যে কোন ধরনের বৈষম্য যেন নতুনভাবে সৃষ্টি না হয় বির্তক এবং সংঘাত-সহিংসতা এড়াতে স্থানীয়রা তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন আন্তবর্তীকালীন সরকারের নিকট।