প্রকাশের সময়: রবিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৫ । ৬:১৮ পিএম প্রিন্ট এর তারিখঃ মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২

প্রবারণা পূর্ণিমায় রঙিন ফানুসে মুখরিত হবে আকাশ : পাহাড় জুড়ে হবে আলোর উৎসব

অনলাইন ডেস্ক

 

সুজন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, বিলাইছড়ি প্রতিনিধিঃ

৬ অক্টোবর উদযাপিত হতে যাচ্ছে প্রবারণা পূর্ণিমা। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। পাহাড়ের জনপদ মুখরিত হবে আনন্দ-উল্লাসে। আকাশ ভরে উঠবে রঙ-বেরঙের ফানুসে, জ্বলজ্বলে আলোর ঝলকানিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে পাহাড়ের প্রতিটি আঙিনা। স্বর্গের চুলামুনিকে এবং গৌতম বুদ্ধের ত্যাগের স্মরণে এটি আকাশে উড়ানো হবে। প্রতি বছরই ভক্তি, শ্রদ্ধা আর ধর্মীয় আবেগকে ধারণ করে এ উৎসব পালিত হয় পাহাড়ে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বৌদ্ধ জাতির আলোকবর্তিকা হিসেবে রয়েছেন ধুতাঙ্গ সাধক ধ্যান ভান্তে অজিতা মহাথের, বৌদ্ধ ধর্মের ধারক-বাহক ছিলেন ৬ষ্ঠ সংগীতিকারক প্রয়াত রাজগুরু অগ্রবংশ মহাথের এবং পরে সাধনানন্দ মহাথের (বনভান্তে)।

প্রবারণা পূর্ণিমা মূলত ভিক্ষুদের তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস শেষে আত্মশুদ্ধি ও পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ভিক্ষুদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, পূজা-অর্চনায় অংশ নেন এবং জীবজন্তুর কল্যাণ কামনায় প্রার্থনা করেন। অশুভ বিদায় ও মঙ্গল কামনার মধ্য দিয়ে মানুষ এই উৎসবে মেতে ওঠে। এ উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো আকাশ ভরানো রঙিন ফানুস। সন্ধ্যা নামলেই গ্রাম থেকে শহর, পাহাড় থেকে পাড়া, নদী থেকে সাগর — সবখানে প্রতিযোগিতা শুরু হয় ফানুস উড়ানোর। কেউ বানায় ছোট, কেউ বানায় বিশাল আকৃতির ফানুস। পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়স্বজন সবাই একত্র হয়ে আকাশে ছাড়ে আলোকিত ফানুস। এতে শুধু আকাশ নয়, মানুষের মনও ভরে ওঠে আলোর আনন্দে।

পাহাড়ি জনপদের প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে থাকবে উৎসবের আমেজ। ভোর থেকে ভক্তদের আনাগোনায় মুখরিত থাকবে বিহার চত্বর। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি থাকবে দান-ধ্যান ও বিশেষ প্রার্থনা। শিশু-কিশোরদের জন্য এই দিন বাড়তি আনন্দের, আর বড়দের জন্য দিনটি হয়ে ওঠে ভক্তি ও প্রার্থনায় মগ্ন হওয়ার সময়। প্রবারণা পূর্ণিমা শুধু ধর্মীয় আচার নয়; এটি পাহাড়ের মানুষের মিলনমেলা ও সংস্কৃতির অনন্য রূপ। পাহাড়ের রাত যখন ফানুসে ভরে যায়, তখন মনে হয় পুরো জনপদ যেন এক উৎসবের আলোয় স্নাত। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে প্রবারণা পূর্ণিমা পাহাড়ি জনপদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আনন্দ-আলোকের প্রতীক যেন।

এ উপলক্ষে বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে চলছে প্রস্তুতি। প্রতিটি বিহারে সাজানো হয়ে থাকে রঙিন আলোকসজ্জা, প্রস্তুত করা হচ্ছে বিশেষ প্রার্থনা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান। স্থানীয় যুব সমাজ, নারী ও শিশুরাও সমানভাবে ব্যস্ত  উৎসবকে আনন্দমুখর করতে।

একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জানান, “প্রবারণা পূর্ণিমা আত্মশুদ্ধি ও মঙ্গল কামনার উৎসব। এদিন আমরা সমাজের কল্যাণ, দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি এবং মানবজাতির শান্তি কামনায় নিয়ে প্রার্থনা করি। আড়াই হাজার বছর আগে গৌতম বুদ্ধ দেখিয়ে গেছেন জগতের সকল প্রাণী সুখী ও দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করতে। এবং নির্বাণগামী হতে।

বৌদ্ধ সম্প্রদায়রা জানান, “প্রবারণা পূর্ণিমা আমাদের সবচেয়ে আনন্দের দিন। এদিন আমরা পরিবার-পরিজন সবাই মিলে পূজা করি, ভিক্ষুদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং রাতে ফানুস উড়িয়ে আকাশ আলোকিত করি। এটি শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরও প্রতীক।” ঘরে ঘরে সামর্থ্য অনুসারে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নিউটন চাকমা, বার্তা প্রধানঃ উথোয়াই চিং মারমা কপিরাইট © সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন