কাপ্তাই হ্রদের পানি নিদিষ্ট সময়ে না কমালে ব্যাহত হতে পারে বরো মৌসুমে ধান চাষ
সুজন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা,
বিলাইছড়ি (রাঙ্গামাটি) প্রতিনিধিঃ
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি নাব্যতা ধরে রাখতে বা নৌযান চলাচল করতে ধীরগতিতে পানি কমছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন এলাকার কৃষক ও সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী। যার ফলে পড়ে রয়েছে বীজতলা বা জালা ধান। ব্যাহত হচ্ছে বরো মৌসুমে ধান চাষ। এতে কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করছেন জলে ভাসা জমি বা ফ্রিন্সল্যান্ডে চাষ করা কৃষাণ ও কৃষাণীরা। বাঁধের উপরে বসবাস করা বেশিরভাগ লোকজন জলে ভাসা জমির উপর নির্ভরশীল। বছরে একবার চাষ করতে পারে। সেটাও যদি করতে না পারে তাহলে নিরুপায় হয়ে পড়ে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় এক মাসের সময়ের ব্যাবধানে এবং খুবই ধীরগতিতে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমছে। ঠিক সময়ে চাষাবাদ করতে না পারলে বর্ষার সময়ে ধান নিয়ে টানাটানি হবে। আগাম বন্যা হলে তলিয়ে যাবে। গত বছরেও জুনে পানি এসেছে যার ফলে হাজারো কৃষকের ধান তলিয়ে গেছে। তাই এবছর এই সময়ে পানি কমানোর কথা থাকলে প্রায় স্থীর অবস্থায় রয়েছে বলে জানান অনেকে।

সরেজমিনে দেখতে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা সামনে কুতুবদিয়া, ধুপ্যাচর, দীঘলছড়ি, আমতলা, ভালাছড়ি, মাইত কাবা ছড়া, গাইতবান, সাক্রাছড়ি, শেলচছড়ি এলাকায় অনেক কৃষক বীজ তলা করেছে। তাদের জমিগুলো এখনো পাঁচ সাত হাত পানির নীচে ডুবে রয়েছে।
এইসব বিষয়ে ধূপ্যাচর এলাকার কৃষক আকাশ মার্মা জানান, গত বছরে নভেম্বরে ২৫ তারিখে বীজতলা (জালা ধান) করেছি। এবছরে ১২ ডিসেম্বর জালা (বীজতলা) ফেলেছি। চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কবে রোপন করবো। গত বছরে এই সময়ে প্রায় রোপনে শেষের দিকে। হ্রদের পানি এখনো টইটম্বুর। কবে ধান লাগবো কবে ধান ঘরে তুলবো। জলেভাসা জমি বছরে একবার করতে পারি। তাও সরকার ঠিক সময়ে পানি কমিয়ে দেয় না। মানুষ কিভাবে চলবে। সরকার কি এই বিষয়গুলো দেখবে। নাকি জানলেও না জানান ভান করে থাকে।
একিভাবে বাজার এলাকার কৃষক মো: ইউনূস জানান, ইদানীং প্রতিদিন ১ ইঞ্চির মতো পানি কমছে। আমি যেখানে বীজ তলা করেছি সেখানে প্রতিদিন মাপি। পানি কমছে না,একদম কমছে না। দ্রুত যদি পানি না কমানো হয় তাহলে ঠিক মতো ধান চাষ/ রোপন করতে পারবো না। ঠিক মতো রোপন করতে না পারলে যদি দেরীতে রোপণ করি তাহলে বর্ষা মৌসুমে টানা টানি হবে। যার ফলে খাদ্য ঘাটতি পড়তে পারে। একিভাবে বহলতলী, গাইতবান, সাক্রাছড়ি,শামুকছড়িসহ বেশকিছু এলাকার কৃষকও একই কথা জানান। সদর এলাকায় সবেমাত্র নিত্যরঞ্জণ চাকমা, সুমিত রঞ্জন চাকমা, ক্যহ্লা মার্মা এবং প্রহর চাকমা সবেমাত্র ধান রোপন করতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান, নাব্যতা বা পানির গভীরতা ধরে রাখতে হয়তো পানি কমাচ্ছেনা। বরো মৌসুমে ধান চাষ এখনি উপযুক্ত সময়। বীজতলা তৈরি ও ধান রোপণ করার প্রকৃত সময়। এখানকার জমিগুলো জলেভাসা জমি। যা সমতলের মতো নয়। পানি কমানোর সঙ্গে সঙ্গে যেমনি রোপণ করতে হয়, তেমনি বাড়ানো সঙ্গে সঙ্গে কেটে ঘরে তুলতে হয়। কৃষি অফিস একমাসের অধিক আগে কৃষকদের মাঝে বীজ ধান, বিভিন্ন জাতের বীজ ও সার বিতরণ করেছে। পানি না কমানোর ফলে তারা রোপনের কথা বাদ দিলাম, চরগুলো না ওঠায় ঠিক মতো বীজ বপন পর্যন্তও করতে পারছে না।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি দেওয়ান জানান, কাপ্তাই বাঁধ হওয়ার ফলে ৫৪ হাজার একর জমি পানি নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। তার মধ্যে রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার একরের মত। এখানকার মানুষের একমাত্র ভরঁসা জলে ভাসা জমি উপর। হ্রদে আগের মতো মাছও পাওয়া যায় না। এজন্য বছরে একবার চাষ করতে পারে সেটাও যদি ঠিক সময়ে চাষ বা ধান রোপন করতে না পারে তাহলে একেবারে শেষ হয়ে যাবে। তাই উচিত দায়িত্বে যারা রয়েছেন, নিদিষ্ট সময়ে পানি কমানো এবং নিদিষ্ট সময়ে কাপ্তাই বাধ বন্ধ করা। যেহেতু এখন কমানোর সময়।কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশ। কারণ কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে।

এই বিষয়ে পিডিপি’র (PDB) ব্যবস্থাপক মাহমুদ হাসান এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা মিটিং-এ নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা প্রস্তাব করেছেন,নির্বাচন পর্যন্ত যাতে ব্যাপকভাবে পানি কমানো না হয়। অর্থাৎ আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নদীর পথে যোগাযোগের সুবিধার জন্য যাতে পানি কমানো না হয়। সে লক্ষে পানি একটু ধীর গতিতে কমানো হচ্ছে। তবে তিনি আরও জানান, তারপরেও এইসময়ে ১০৫ ফিট এমএসএল উচ্চতায় পানি থাকার কথা হলেও রয়েছে ৯৮ ফিট এমএসএল উচ্চতা। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা।
তাই একই ভাবে শুধু বিলাইছড়ি উপজেলা নয়, বাঁধের উপরে রয়েছেন জুরাছড়ি, বরকল, লংগদু, বাঘাইছড়ি ও নানিয়াচর উপজেলার লাখো কৃষক। যাহাতে সঠিক সময়ে কৃষকরা ধান চাষ করতে পারে সে বিষয়ে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক নাজমা আশরাফী’ এবং পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা সুদৃষ্টি কামনা করছেন স্থানীয় কৃষক ও সংশ্লিষ্টরা।



