সুজন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, বিলাইছড়ি প্রতিনিধিঃ
রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে হাজারো মানুষের ঢল। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে পল্টুন ঘাট থেকে একটি বিশাল বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে বাজার হয়ে উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা চত্বরে এসে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) উপজেলা শাখার সভাপতি এম এ সালাম ফকির এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মোঃ মামুনুর রশীদ মামুন।

সঞ্চলনা করেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাফর আহাম্মদ। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শাকিল, জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ মোঃ জসিম উদ্দিন, জেলা বিএনপির সহ-সম্পাদক মোঃ ইলিয়াস, সেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোরশেদ আলম, জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ নুরুন্নবী, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক নাহির উদ্দীন অর্ণব।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি চাথোয়াই রোয়াজা, সহ সভাপতি বারেক খাঁ। উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জয়সিন্ধু চাকমা, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম সর্দার, উপজেলা যুবদলের সভাপতি মোঃ রেজাউল করিম রনি, জাসাসের সভাপতি জাকির হোসনে, উপজেলা মহিলা দলের সভানেত্রী দিলারা বেগম, সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আল মামুন, ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোঃ শাহীদুল ইসলাম।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, মো: নাসির আলী হায়দার, সুব্রত তঞ্চঙ্গ্যা (খুশি বাবু), যতীন তঞ্চঙ্গ্যা, মোঃ জাকির হোসেন, শামশু তঞ্চঙ্গ্যা, পালম বম, ত্রিপেল ত্রিপুরা, ভিএল পাংখোয়া, শান্তি রায় চাকমা, মিজানুর রহমান সিকদার, মোঃ অলি আহমেদ, মিলন চাকমা, প্রিয় জ্যোতি চাকমা, মনির হোসেন, মিলন চাকমা এবং কাপ্তাই উপজেলার বিএনপির নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলা অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা বলেন, ৯০ শতাংশ আসন নিয়ে সরকার গঠন করবে, আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ১৭ বছরে অন্যায় অত্যাচার যা করেছে সব বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানো হবে। আমরা দেশে অনেক সম্প্রদায় রয়েছি কিন্তু সবাই বাংলাদেশি। শেখ মজিবুর রহমান সবাইকে বাঙালি বানিয়ে ফেলেছে। এখানে পোশাকে বুঝা যায় বমদের তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে, রয়েছে ধর্মও। এছাড়াও রয়েছে চাকমা, মার্মা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা সহ ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠী। অন্যায় করছে বলে তাদের গণ-অভ্যুত্থানে বিগত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে। জাতীয়তাবাদী আদর্শের সাথে জনগণকে একত্রিত করার লক্ষ্যে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। দিবসটি বাংলাদেশী মানুষদের জন্য আনন্দ, উদ্দীপনা ও প্রেরণার। দলটি বাংলাদেশী ভূখন্ডের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা এবং শক্তিশালী সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার নীতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
তারা আরো বলেন, স্বাধীনতার অব্যহতি পরেই ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য একদলীয় বাকশালী ব্যবস্থা কায়েম করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতাত্তোর আওয়ামী দুঃশাসনে বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা ও রাজনৈতিক হত্যাকান্ড সাধারণ বিষয় হয়ে উঠে। যার অনিবার্য পরিণতি হয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। আর এই দুর্ভিক্ষে ১০ লক্ষ মানুষ মারা যায়। তৎকালীন আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী বাকশাল কায়েম করে স্বৈরশাসনকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করে। শহীদ জিয়াউর রহমান ক্ষমতাসীন হয়ে পুনরায় বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করে জনগণের নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। শহীদ জিয়ার সৃষ্টি বিএনপি বিগত ৪৭ বছরে কয়েকবার সুষ্ঠুু নির্বাচনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়ে দেশ ও জনগণের সমৃদ্ধি ও কল্যাণে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে।

নেতারা আরো বলেন, নানামুখী সুদুরপ্রসারী চক্রান্তের মধ্যেও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় চির উন্নতশির বিএনপি অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। নির্বাসিত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে নির্দ্বিধায় জীবন উৎসর্গ করেছে অসংখ্য নেতাকর্মী। ৮০’র দশকে ৯ বছরের সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির রাজপথে আপোষহীন ভূমিকা ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়। তাঁর সেই অগ্রণী ভূমিকার জন্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার লক্ষ্যে বিএনপি ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালনকালে সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, দীর্ঘ দেড় যুগ পর অনুকূল পরিবেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে বিএনপি। গত বছরের ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রাণ ফিরে পায় দলটি।
তারা আরও বলেন, ইনটেরিম গভর্মেন্ট ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই নির্বাচন যাতে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এদিনে আমাদের শপথ নিতে হবে। দেশে আর কোনো অবস্থাতেই স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত হতে দেওয়া যাবে না। আরও বলেন, বিএনপি জয়ী হলে দেশে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হবে, যেখানে সব দলের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, সে বিষয়ে সবাইক কাজ করতে হবে।