নেটওয়ার্ক সেবায় দুর্ভোগে পাহাড়বাসী

সিএইচটি বার্তা ডেস্কঃ
ইন্টারনেট ও নেটওয়ার্ক সেবায় চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে দুর্গম পার্বত্যাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জনবহুল গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। চাঁদাবাজির রোশানালে ভুগছে অসংখ্য মানুষ দাবি স্থানীয়দের। দিনের পর দিন নেট বন্ধ রেখে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এদিকে অফিসে কথা বলেও হচ্ছে না কোন সুরাহা।
মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন থাকায় বর্তমানে কোম্পানিটির কয়েক লাখ গ্রাহক চরম বিপাকে পড়েছেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং প্রশাসনিক কাজকর্মে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটছে। এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, গত দু-এক মাসে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ১১টি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির টাওয়ারে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় চট্টগ্রাম থেকে আসা বিটিসিএল’র অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
পাহাড়ের মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন উপজেলাগুলো হলো— খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা, রামগর এবং রাঙামাটির নানিয়ারচর ও লংগদু (আংশিক) উপজেলা।
স্থানীয়রা আক্ষেপ করে বলেন, রবি কিংবা এয়ারটেল নেটওয়ার্ক সমস্যায় পড়েননি এমন ব্যবহারকারী খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কোনো না কোনো সময়ে নেটওয়ার্কের ঝামেলায় পড়তে হয় পাহাড়ের বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর। খুব গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তেও নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে অনেক সুযোগ সুবিধা হাতছাড়া হয়ে যায় প্রায়শই। বর্তমান সময়ে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ইন্টারনেট বা নেটওয়ার্ক সংযোগ। মোবাইল ফোনের গুরুত্ব নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ জরুরী মূহুর্তে কাউকে ফোন করলে থাকছেনা নেটওয়ার্ক।
পাহাড়ে স্বাভাবিকের তুলনায় নেটওয়ার্ক ধীর গতির। তবুও মানুষ কষ্ট হলেও মানিয়ে নিয়েছে। নেটওয়ার্ক সমস্যার ফলে ধস নেমেছে ব্যবসা-বাণিজ্য, টাকা পয়সার লেনদেনে। ফলে নিত্যদিনের সমস্যা আরেকটি যুক্ত হয়েছে পাহাড় অঞ্চলের মানুষের।
কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমশের দেওয়ান বলেন, রবি সিমে বিকাশ একাউন্ট, নগদ একাউন্ট থাকার কারণে ৯দিন লেনদেন আটকে আছে এবং ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করতে না পারায় ব্যবসায় বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ি অঞ্চলে রবি, এয়ারটেল সিম শতকরা ৯০জন মানুষ ব্যবহার করে। তবে নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকার কারণে আমাদের লেনদেন বন্ধ। এভাবে কয়েকদিন চলতে থাকলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে মানুষের জমিতে কাজ করতে হবে।
বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানিটির একজন প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাহাড়ে বিচরণ করা সশস্ত্র আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ সম্প্রতি টাওয়ার অপারেটরদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছে। তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করা হলে তারা এখানে হামলা চালায়। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো মোবাইল কানেক্টিভিটি ছাড়াই রয়ে গেছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
তবে পাহাড়ে নেটওয়ার্ক সমস্যা নিয়ে ইউপিডিএফ নেতা অংগ্য মারমার বক্তব্য- নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করার সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি বলেন, পাহাড়ে নেটওয়ার্কের সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। চাঁদাবাজির এই অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং এটিকে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বলে উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল জানান, পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে আগে পরে কয়েকটি টাওয়ারে হামলা, ভাঙচুর ও নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্নের ঘটনা ঘটলেও লিখিত কোনো অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ হলে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই ঘটনা শুধুমাত্র পাহাড়ি অঞ্চলে শান্তি ও সার্বভৌমত্বকে ক্ষুন্নই করে না, বরং চাঁদাবাজি ও সহিংসতার হাতিয়ার হিসেবে ডিজিটাল অবকাঠামোকে কাজে লাগানোর একটি বিপজ্জনক নজিরও স্থাপন করেছে— এমনটাই মনে করছেন পাহাড় গবেষকরা।