হেডম্যান পাড়া কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারে নানা আয়োজনে ২দিনব্যাপী প্রবারণা পূণিমা সম্পন্ন
চাইথোয়াইমং মারমা, বিশেষ প্রতিবেদক:
রাঙ্গামাটি জেলা রাজস্থলী উপজেলা ৩নং বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের ঐতিহ্য হেডম্যান পাড়া কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার নানা আয়োজনের ২দিনব্যাপী প্রবারণা পূর্ণিমা সম্পন্ন হয়। ৭ অক্টোবর সকাল ৮ টায় নর-নারী দায়ক দায়িকাসহ শিশুরা বিহারে এসে সমাবেত উপস্থিতি দেখা গেছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিহার পরিচালনা কমিটি উপদেষ্টা ৩নং বাঙ্গালহালিয়া ইউনিন পরিষদ চেয়ারম্যান আদুমং মারমা সহধর্মিণী ক্রানুবাই চৌধুরী, বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মংসাথোয়াই মারমা, সাবেক বিহার সভাপতি ঞোমং মারমা, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী চাইথোয়াইমং মারমা, ইউনিসেফ উপজেলা ম্যানেজার থুইসাচিং মারমা, প্রধান শিক্ষক আখ্যাইমং চৌধুরী, সাবেক বিহার পরিচালনা কমিটি সাধারণ সম্পাদক উচিংমং চৌধুরী, কমিটির সদস্য সুইথুইমং মারমা, উবা মারমা, ইঞ্জিনিয়ার মংওয়াসিং মারমা, মংঞো মারমা, মংচিং চৌধুরী, সাবেক প্রধান শিক্ষক মংহলাঅং মাষ্টার, দায়ক পুলক বড়ুয়া, বিহার পরিচালনায় কমিটি অন্যান্য সদস্য এবং দায়ক দায়িকাবৃন্দ।
অনুষ্টানে সঞ্চলনায় ছিলেন, মংকই মারমা। এরপর দায়ক-দায়িকারা বিভিন্ন ধরনের ফুল-ফল, মিষ্টি জাতীয় টিফিন ভাতের প্ল্যাটে সাজিয়ে একে একে সারিবদ্ধ ভাবে নর-নারী, যুবক-যুবতী, শিশুসহ দায়ক-দায়িকা গৌতম বুদ্ধের কাছে এসব জিনিস দান করেছেন। এবং গৌতম বুদ্ধের কাছে মৌমবাতি, আগরবাতি প্রজ্জলনের মাধ্যমে প্রার্থণা করা হয়।
দুপুরে কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ শ্রমণ সহ নর-নারী, দায়ক ও দায়িকাদের ফলমূল সহ আহার ছোওয়াইং পরিবেশন করেন।
বিকাল ৪ টায় হেডম্যান পাড়া কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ ঞানাওয়াইনসা থেরো গৌতম বুদ্ধের কাছে প্রথমে প্রার্থণার মধ্যে দিয়ে নর-নারী সহ দায়ক-দায়িকার উদ্দেশ্য ধর্মের জাতক ও দেশনা প্রদান করেন। বিহারাধ্যক্ষ আরো বলেন, গৌতম বুদ্ধের বাণী অনুযায়ী ধর্মের রীতিনীতি ৩ মাস বর্ষবাস বা মারমাদের ওয়া ধরে ঐ ৩ মাস বর্ষবাসে বিহারে স্থায়ীভাবে বড় ভান্তে, শ্রমণ সহ সন্ন্যাসী দায়ক-দায়িকারা মাছ, মাংস খাবার বিরত থাকেন। এবং অন্য বিহারে গিয়ে ভিক্ষু শ্রমণ রাত্রি যাপন হতে বিরত থাকাটা হলো গৌতম বুদ্ধের ধর্মের রীতিনীতি। ৩ মাস বর্ষবাসকালীন শুধু মাছ মাংস ছাড়া নিরামিষ খাবার খেতে হয় বলে জানা যায়।
গত ৬ তারিখে হেডম্যান কেন্দ্রীয় পাড়া বৌদ্ধ বিহারে যুবক ও যুবতীরা পূর্ণিমা চন্দ্রিমা রাতে আনন্দ মূখরিত পরিবেশে মারমাদের ঐতিহ্যগত নানা পিঠা তৈরি সারারাত কাকন বিনি চালের গুড়িকে পায়েস বানিয়ে ভোর বেলায় দলবল নিয়ে ভাগ করে যুবক-যুবতীরা পাড়ায় পাড়ায় বাড়ি গিয়ে এসব জিনিস বিতরণ করতে দেখা গেছে। যুবক-যুবতীদের উদ্যােগে ফানুস তৈরি করতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, উপজেলা সহ ইউনিয়নের বিভিন্ন মারমা অধ্যুষিত এলাকাজুড়ে সারাদেশে বুদ্ধ ধর্মেরলম্বীরা একসাথে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করেন। অত:পর ডাকবাংলা পাড়া বৌদ্ধ বিহার কাকড়াছড়ি পাড়া বৌদ্ধ বিহার, নাইক্যছড়া বৌদ্ধ বিহার, যৌথখামার বৌদ্ধ বিহার, ধলিয়া বৌদ্ধ বিহার, ধলিয়া নতুন বৌদ্ধ বিহার, রাজস্থলী মৈত্রী বৌদ্ধ বিহার, তাইতং পাড়া বৌদ্ধ বিহার, মবইং বৌদ্ধ বিহার, উগাড়ী বৌদ্ধ বিহার, লংগদু বৌদ্ধ বিহার, পূর্ণবাসন বৌদ্ধ বিহার, ছাইংখ্যাই বৌদ্ধ বিহার, ম্রওয়া বৌদ্ধ বিহার, চুসওয়া বৌদ্ধ বিহার, বালুমোরা বৌদ্ধ বিহার, ম্রওয়া পাড়া বৌদ্ধ বিহারসহ অন্য বিহারে এক সাথে বুদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা একসাথে নিয়মনীতি অনুযায়ী প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করেছেন বলে জানা যায়।
গৌতম বুদ্ধের বাণী অনুসারী বুদ্ধ মূর্তিকে স্নান করা হযেছে। বুদ্ধ ধর্ম একটি শান্তি ধর্ম হিসেবে বিশ্বে সুপরিচিত। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ধর্ম যার যার উৎসব সবার।
কয়েকজন বুদ্ধ ধর্মের অনুসারী দায়ক-দায়িকা নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক জানান, আমরা এবারে শান্তি শৃঙ্খলা পরিবেশে প্রতিটি পাড়াতে বৌদ্ধ বিহারে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করতে পেরেছি। সন্ধ্যাবেলা ফুল পূজা, পানি পূজা, চীবর দান, মোমবাতি, আগর বাতি প্রজ্জালন সহ পঞ্চশীল প্রার্থণা, অষ্টশীল প্রার্থণা, গৌতম বুদ্ধের কাছে প্রার্থণা করেন।
শেষান্তে বিহারাধ্যক্ষ ঞানাওয়াইনসা থেরো বলেন, বিশ্বের সকল জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে শান্তিময় বসবাস করুক এটা গৌতম বুদ্ধের কাছে প্রার্থণা করছি। বিহার প্রাঙ্গণের ফানুস উড়ানো হয়েছে। সকল প্রাণী সুখী হউক সব্বে সত্তা সুখীতা হোন্ত।


















