শিরোনাম:

পার্বত্য চট্টগ্রামের এক কিংবদন্তির নাম মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা

পার্বত্য চট্টগ্রামের এক কিংবদন্তির নাম মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা

১৫ সেপ্টেম্বর ৮৬ তম জন্মবার্ষিকী -তে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন

 

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এম এন লারমা) : জুম্ম জাতির কিংবদন্তি ও বাংলাদেশের রাজনীতির এক অগ্নিশিখা। আজ ১৫ সেপ্টেম্বর। এ দিনটি নিছক কোনো ক্যালেন্ডারের তারিখ নয়, যেন ইতিহাসের বুক চিরে ফুটে ওঠা এক জ্বলন্ত আগুনের ফুল। পাহাড়ের আকাশে-বাতাসে আজও প্রতিধ্বনিত হয় তাঁর বজ্রকণ্ঠ, তাঁর বিপ্লবী আহ্বান-যেন পাহাড়ের প্রতিটি পাখি তাঁর নাম উচ্চারণ করে ডাকে, প্রতিটি ঝর্ণার ধ্বনি তাঁর সংগ্রামের গল্প শোনায়।

আজ পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জনগণের অবিসংবাদিত নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী। মহান এ বিপ্লবী নেতাকে আমি জানাই পুষ্পস্পদ শ্রদ্ধা এবং বিপ্লবী অভিবাদন।

এই দিনটি কোনো সাধারণ দিন নয়-এ দিনটি ইতিহাসের পাতায় লেখা এক অমলিন অধ্যায়, একটি অগ্নিশিখার জন্মদিন। আজকের দিনটি পালন করা হয় এক মহান নেতার জন্য, যিনি শুধু রাজনৈতিক চরিত্র ছিলেন না, বরং একটি জাতির আশা, আত্মবিশ্বাস ও স্বপ্নের অবিস্মরণীয় প্রতীক ছিলেন-মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা।

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ছিলেন বিপ্লবী অভিধায় রচিত, রক্ত ও মাংসের দৃঢ় বুননে গড়া এক নিখুঁত ভদ্রলোক। তিনি কেবল সাহসী ও অদম্য নেতা ছিলেন না, বরং ভদ্রতা, শালীনতা এবং মানবিকতার এক অনন্য প্রতীক, যিনি বিপ্লবী চেতনাকে নিজের জীবনভর অনুশীলন করেছিলেন। তাঁর আচরণে ভদ্রতার সৌন্দর্য, আর তাঁর অন্তরে ছিল নিপীড়িতের জন্য অটল প্রেম ও ন্যায়ের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার।

আজ, যদিও তিনি শারীরিকভাবে আমাদের মাঝে নেই, তাঁর অস্তিত্বের অনুপ্রেরণা আমাদের চারপাশে জেগে আছে। পাহাড়ের বাতাসে, নদীর কলকল ধ্বনিতে, কাপ্তাই হ্রদের শান্ত জলরাশিতে, প্রতিটি পাতার কাঁপুনি, প্রতিটি শিকড়ের কণায় আজও জীবন্ত হয়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে তাঁর কণ্ঠস্বর। তার অগ্নিঝরা কণ্ঠস্বর আজও আমাদের হৃদয়ে বজ্রগর্জনের মতো বাজে; তাঁর চিন্তার দীপ্তি পাহাড়িদের চোখে আলোর রেখা ফেলে; এবং তাঁর বিপ্লবী আদর্শ পাহাড়ি আদিবাসীদের চলার পথে পথপ্রদর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

তিনি ছিলেন সেই অদম্য প্রাণ, যিনি জীবনের প্রতিটি নিঃশ্বাসে লিখেছিলেন সংগ্রাম ও মুক্তির কবিতা। পাহাড়ের নীরব কণ্ঠগুলোকেও তিনি শিখিয়েছিলেন উচ্চস্বরে দাবি তোলার সাহস। তাঁর পদচিহ্নে যে বাতাসে স্বাধীনতার গন্ধ, জুম্ম জনগণের অধিকার ও মর্যাদার অমলিন প্রতীক ফুটে ওঠে, তা আজও আদিবাসী পাহাড়িদের প্রেরণা জোগাচ্ছে।

এই ১৫ সেপ্টেম্বর শুধু জন্মদিন নয়, এটি আদিবাসী পাহাড়িদের জন্য এক নবজাগরণের উৎসব-একটি দিনে যিনি আদিবাসী পাহাড়িদের শিখিয়েছেন কীভাবে অদম্য হওয়া যায়, কীভাবে অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রুখে দাঁড়াতে হয়, এবং কীভাবে নিজের বিপ্লবী চেতনার শক্তিকে চিরস্থায়ী করে তোলা যায়।

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা চলে গেছেন শরীরের শক্তিতে, কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন প্রতিটি আন্দোলনে, প্রতিটি সংকটের মুহূর্তে, প্রতিটি জুম্ম জনগণের দাবিতে। তাঁর অগ্নিপুরুষ আত্মা আদিবাসী পাহাড়িদের পথপ্রদর্শক, পাহাড়িদের অভিসার্য, পাহাড়িদের অন্তরার্জিত শক্তির প্রতীক।

হারানো গ্রাম থেকে জাগ্রত কিংবদন্তি :

অধুনা রাঙামাটির বুকের কাছে ছিল মহাপুরম-এক কর্মচঞ্চল গ্রাম, যেখানে নদীর স্রোত বয়ে যেত মানুষের স্বপ্ন ও আশা নিয়ে। কিন্তু নির্মম কাপ্তাই বাঁধের জলে সেই গ্রাম চিরদিনের মতো বিলীন হয়ে গেল। হারিয়ে গেল স্মৃতি, হারিয়ে গেল গৌরব। কিন্তু সেই হারানো গ্রামের বুকেই জন্ম নিয়েছিল এক অগ্নিপুরুষ-মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এম.এন. লারমা)। তিনি শুধু সাধারণ মানুষ নন; তিনি ছিলেন জুম্ম জাতির জাগরণের অগ্নিধ্বজ, নিপীড়িত মানুষের অটল বন্ধু, বিপ্লবের প্রতীক। এম.এন. লারমা ছিলেন সেই অদম্য নেতা, যিনি স্বার্থান্বেষী চক্র, শোষক ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কখনো চোখ বন্ধ করেননি।

তিনি ছিলেন জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক- একজন অবিসংবাদিত সংগ্রামী, যাঁর কণ্ঠ ছিল শৃঙ্খল ভাঙার বজ্রনিনাদ, যাঁর পদচিহ্নে ফুটেছে জুম্ম জনগণের অধিকার, মর্যাদা ও মুক্তির অমলিন চিহ্ন।

তার আগুনে জ্বলন্ত মন, অটল দৃঢ়তা এবং বিপ্লবী আদর্শ আজও পাহাড়ের বাতাসে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। যে মানুষটি হারানো গ্রামকে ইতিহাসের অম্লান আলোকবর্তিকা বানিয়ে গেছে। তিনি কেবল ইতিহাসের পাতা নয়- তিনি জাগ্রত প্রতিরোধের এক অমর প্রতীক।

সংগ্রামের মধ্যেই গড়ে ওঠা লৌহপুরুষ :

১৯৩৯ সালে জন্ম নেওয়া এম.এন. লারমা শুধু একটি পরিবারে বড় হননি-তিনি বড় হন সংগ্রামের শিহরণে, ন্যায়ের আগুনে, এবং মানুষের জন্য আত্মত্যাগের আদর্শে। তাঁর পিতা ছিলেন শিক্ষক, মা ছিলেন ধর্মপ্রাণ সমাজসেবী; সেই পরিবারেই তিনি শিখেছিলেন সততা, ধৈর্য, এবং নিপীড়িত মানুষের জন্য জীবনকে উৎসর্গ করার মহিমা।

কিন্তু এম.এন. লারমা কখনও বইয়ের পাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি। শৈশব থেকেই তিনি চোখের সামনে দেখেছেন পাহাড়ি মানুষের নীরব কান্না, অধিকারহীনতার যন্ত্রণা, আর শোষণকারীর নির্মম মুখ। সেই অভিজ্ঞতাই তাঁকে পরিণত করেছিল অগ্নিমুখর বিপ্লবী, যিনি কখনো ন্যায়ের পথ থেকে সরে আসেননি।

পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কণ্ঠ তোলার জন্য তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। বহুদিন বন্দি জীবনেও তিনি ভেঙে পড়েননি-বরং সেই কঠোরতম সময়ই তাঁকে লৌহমানবের মতো দৃঢ়, আগুনের মতো উগ্র, এবং বিপ্লবী চেতনায় আরও অটল করে গড়ে তুলেছিল। প্রতিটি প্রতিকূলতা, প্রতিটি অত্যাচার তাঁর অন্তরকে আরও তীক্ষ্ণ করে তুলেছিল; প্রতিটি শৃঙ্খল তাঁকে আরও স্বাধীনতার ঝড়ের মতো শক্তিশালী বানিয়েছিল।

এমনই এক মানুষ- যিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন সাধারণ পরিবারে, কিন্তু বেড়ে উঠেছিলেন সংগ্রামের অগ্নিশিখায়, যিনি তার প্রতিটি নিঃশ্বাসে পাহাড়ের মানুষের মুক্তির লড়াইকে রক্তিম করে তুলেছিলেন।

শিক্ষক, আইনজীবী নয়- একজন সত্যিকারের নেতা।একজন শিক্ষক শুধু পাঠদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন না; তিনি হয়ে ওঠেন আলোকবর্তিকা, যিনি সমাজকে পথ দেখান। এম. এন. লারমা ছিলেন তার থেকেও অনেক বেশি-তিনি ছিলেন এক বিরল ব্যক্তিত্ব। শিক্ষকের মতো জ্ঞানদানের আগুন, আইনজীবীর মতো অদম্য সাহস, আর নেতার মতো সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি নিয়ে তিনি প্রবেশ করেছিলেন পাহাড়ের মানুষের হৃদয়ে। তাঁর উপস্থিতি ছিল জ্ঞান, ন্যায় ও নেতৃত্বের এক অপূর্ব সমন্বয়, যা আজও প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

শিক্ষক হিসেবে তিনি ছাত্রদের হৃদয়ে দেশপ্রেমের আগুন জ্বালাতেন। কঠিনতম বিষয়ও তিনি সহজ করে বোঝাতেন, কিন্তু শিক্ষার চর্চার মধ্য দিয়ে তিনি যে চেতনাটি ছড়িয়ে দিতেন, তা ছিল ন্যায়ের, সততার, এবং অধিকার আদায়ের চেতনা। ছাত্ররা তাঁর কাছে কেবল জ্ঞানই শেখেননি, বরং শিখেছেন দুর্বলের পাশে দাঁড়ানোর সাহস, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অটল মনোবল।

আইনজীবী হিসেবে তিনি নিপীড়িতের পক্ষে দাঁড়াতেন নির্ভীক সাহসে। আদালতের কক্ষে বা যেকোনো সাংবিধানিক ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতেও তিনি কখনো পিছপা হননি। কিন্তু এই সব পরিচয় ছিল কেবল বাহ্যিক। প্রকৃত এম.এন. লারমা একজন নেতা, যিনি পাহাড়ের মানুষের প্রতিটি যন্ত্রণার কণ্ঠে নিজের কণ্ঠ মেলাতেন। তিনি ছিলেন বজ্রকণ্ঠ, যিনি নিপীড়িতের কণ্ঠরোধের ষড়যন্ত্র ভেঙে দিয়ে তাদের দাবিকে উচ্চস্বরে ঘোষণা করাতেন।

তাঁর নেতৃত্বে আমরা দেখেছি, কীভাবে একজন আদর্শ শিক্ষকের নীতিবোধ এবং মানবিকতার মূল্যবান শিক্ষা নিপীড়িত জনগণের মুক্তি ও অধিকার আদায়ে জীবন্ত শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। শিক্ষক, আইনজীবী, নেতা- এই তিনটির সংমিশ্রণেই তিনি দাঁড়িয়েছিলেন একটি জাতির আশা ও প্রতিরোধের অমলিন প্রতীক হিসেবে।

সংসদে বজ্রনিনাদ :

১৯৭০ সালে, পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে, তিনি কেবল একটি পদই জয় করেননি-তিনি জয় করেছিলেন নিপীড়িত জনগণের অধিকার ও আত্মপরিচয়কে। স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদেও সেই প্রতিশ্রুতি তিনি ধরে রাখলেন। কিন্তু এম.এন. লারমার আসল অবদান ছিল সেই মুহূর্তে, যখন তিনি বাংলাদেশের সংবিধান রচনার মঞ্চে দাঁড়িয়ে উচ্চারণ করলেন-

“আমরা বাঙালি নই, আমরা পাহাড়ি, আমরা জুম্ম। আমাদের জাতিসত্ত্বা ও পরিচয় অস্বীকার করে কোনো সংবিধান আমরা মেনে নেব না।”

এই এক বাক্য কেবল শব্দ নয়-এটি ছিল শতাব্দীর শৃঙ্খল ভাঙার ডাক, একটি নিপীড়িত জাতির বজ্রনিনাদ, ইতিহাসকে কাঁপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। সংসদ কেঁপে ওঠে তাঁর কণ্ঠে। অন্ধকারকে কাটিয়ে উঠে আসে সেই অগ্নি, যা নিপীড়িত জনগণের অন্তঃস্থল থেকে জন্ম নেয়।

১৯৭২ সালে যখন বাংলাদেশের সংবিধানে লেখা হলো- “বাংলাদেশের সকল জনগণই বাঙালি বলিয়া বিবেচিত হইবে”। তখন এমএন লারমা সংসদ কাঁপিয়ে দিয়ে উচ্চারণ করেন- “আমি একজন চাকমা। আমার বাপ-দাদা, চৌদ্দপুরুষ কেউ বলেনি আমি বাঙালি”।

আজ কেন এই পবিত্র সংবিধানে আমাকে বাঙালি বলা হচ্ছে? একজন বাঙালি যেমন চাকমা হতে পারে না, তেমনি একজন চাকমা বাঙালি হতে পারে না।” এরপর তিনি সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন। এই প্রতিবাদ ইতিহাসে খোদাই হয়ে যায় এক অমর চেতনা হিসেবে।

একই বছরে যখন স্বাধীন বাংলাদেশের খসড়া সংবিধান নিয়ে জাতীয় সংসদে উত্তপ্ত আলোচনা চলছিল, তখন এক কণ্ঠ ছিল সবচেয়ে স্পষ্ট, সাহসী এবং আপসহীন-মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। তিনি কেবল একজন সংসদ সদস্য ছিলেন না, তিনি ছিলেন প্রান্তিক মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিধ্বনি। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবিধানে সুনির্দিষ্ট বিধান রাখার দাবিতে সোচ্চার হয়ে জাতির উদ্দেশ্য বলেছিলেন-

“আজ যে সংবিধান আমরা আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য রেখে যাচ্ছি, সেই সংবিধানে যদি এমন একটা নীতি না থাকে, যে নীতির দ্বারা আমাদের দেশে যারা ঘুষখোর, যারা দুর্নীতিপরায়ণ, তাদের যদি আমরা উচ্ছেদ করতে না পারি, তাহলে এই সংবিধানের কোন অর্থ হয় না।… এই সংবিধানের মাধ্যমে আমরা যে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি সেই সমাজতন্ত্রের নামে আমরা আবার যদি উচ্চ শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর ও সেই ক্ষমতা অপব্যবহারকারীদেরই দেখতে পাই তাহলে ভবিষ্যতের নাগরিক, যারা আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধর, তারা আমাদেরকে বলবে যে, যারা এই সংবিধান প্রণয়ন করে গিয়েছেন, তারা ক্ষমতায় মদমত্ত হয়ে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং দুর্নীতির পথ উন্মুক্ত করে গিয়েছেন।”

[গণপরিষদের বিতর্ক, খণ্ড ২, সংখ্যা ৪; ১৯ অক্টোবর ১৯৭২ তারিখে সংবিধান বিলের উপর সাধারণ আলোচনার অংশ হিসাবে দেওয়া লারমার বক্তব্যের অংশবিশেষ]।

লারমার কণ্ঠে শুধু প্রতিবাদই ছিল না, ছিল সারাদেশের খেটে খাওয়া মানুষের গভীর বেদনার প্রতিধ্বনি। তাঁর চোখে ভেসে উঠেছিল নদীমাতৃক বাংলাদেশের ঘামে ভেজা জীবনচিত্র-নৌকা বাওয়া মাঝি, ক্ষেতের মাটি চষে ফসল ফলানো কৃষক, কিংবা ভোর থেকে রাত অবধি রিকশা টেনে চলা শ্রমজীবী মানুষ। কিন্তু সেই কোটি মানুষের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা খসড়া সংবিধানে স্থান পায়নি-এমন বেদনা তিনি অকপটে প্রকাশ করেছিলেন।

তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন-

“আমার বিবেক, আমার মনের অভিব্যক্তি বলছে, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মনে কথা পুরোপুরি এই খসড়া সংবিধানে নেই। … আজ আমি দেখতে পাচ্ছি পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী, বুড়িগঙ্গা, মাথাভাঙ্গা, শঙ্খ, মাতামুহুরী, কর্ণফুলী, যমুনা, কুশিয়ারা প্রভৃতি নদীতে রোদ-বৃষ্টি মাথায় করে যাঁরা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বৎসরের পর বৎসর ধরে নিজেদের জীবন তিলে তিলে ক্ষয় করে নৌকা বেয়ে, দাঁড় টেনে চলেছেন, রোদ-বৃষ্টি মাথায় করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যারা শক্ত মাটি চষে সোনার ফসল ফলিয়ে চলেছেন, তাঁদেরই মনের কথা এ সংবিধানে লেখা হয়নি। আমি বলছি, আজকে যাঁরা রাস্তায় রাস্তায় রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন, তাঁদের মনের কথা এই সংবিধানে লেখা হয়নি।”

[গণপরিষদের বিতর্ক, খণ্ড ২, সংখ্যা ৯; ২৫ অক্টোবর ১৯৭২ তারিখে সংবিধান বিলের উপর সাধারণ আলোচনার অংশ হিসাবে দেওয়া লারমার বক্তব্যের অংশবিশেষ]।

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার এই তীব্র উচ্চারণ আজও ইতিহাসে অনন্য হয়ে আছে। তিনি কেবল দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেননি, তিনি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন-একটি রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হলো তার জনগণ। আর জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা যদি সংবিধানে প্রতিফলিত না হয়, তবে সেই সংবিধান কেবল কাগজে লেখা শব্দ হয়ে থাকে, মানুষের জীবনে তার কোনো অর্থ দাঁড়ায় না।

এম.এন. লারমা ছিলেন সেই একমাত্র নেতা, যিনি কাঁপিয়ে দিয়েছেন সংসদ কেবল নিজের জন্য নয়, বরং সেই লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য, যাদের কণ্ঠ দীর্ঘদিন নিঃশব্দ ছিল। এই এক বাক্যই তাঁকে করে তুলেছে অমর, একটি প্রতীক, একটি বজ্রাঘাত, যেটি এখনও পাহাড়ের বাতাসে, নদীর স্রোতে, জুম্ম জনগণের হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হয়।

ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ :

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা কেবল একজন নেতা নয়-তিনি ছিলেন একটি অমলিন আদর্শ, এক অগ্নিমুখর ব্যক্তিত্ব, এবং নিপীড়িত মানুষের জন্য অটল আশ্রয়। তিনি ছিলেন, সাহসী – একটি সাহস, যা ভয়কে চূর্ণ করে দিয়ে সত্যের পথে অটল। ধৈর্যশীল-যে ধৈর্য প্রতিটি কষ্টের ঝড়, প্রতিটি ষড়যন্ত্রের প্রহরে অনড় থাকত। আত্মবিশ্বাসী-যে আত্মবিশ্বাস নিপীড়িত জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে শক্তি জুগাত। এবং কঠোর শৃঙ্খলাবদ্ধ-যে শৃঙ্খলা তাঁকে রাজনৈতিক মঞ্চে, ব্যক্তিগত জীবনেও অদম্য করে তুলেছিল।

তাঁর আচার বিনয়ী ছিল-নম্র, ভদ্র, শান্ত। কিন্তু সেই বিনয়ের আড়ালে দগ্ধ আগুনের মতো বজ্রকঠিন আদর্শ লুকিয়ে থাকত। মানুষ তাঁকে দেখত শান্ত, কিন্তু অনুভব করত তাঁর অন্তর্দাহের তীব্রতা, যা অন্যায়ের বিরুদ্ধে অদম্য লড়াই করার প্রেরণা জুগাত।

তার চোখে ছিল স্বপ্ন-একটি স্বপ্ন যেখানে জুম্ম জনগণ, পাহাড়ের মানুষ, অধিকারহারা সকলের কণ্ঠ ছিল মুক্ত এবং মর্যাদা ছিল অটল। তার কণ্ঠে ছিল দৃঢ়তা-একটি বজ্রঘোষ যা নিপীড়িতের যন্ত্রণাকে তুলে ধরত, অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক অমলিন প্রতিবাদ হিসেবে প্রতিধ্বনিত হতো।

এবং তাঁর জীবন ছিল সংগ্রামের অগ্নিপথ। প্রতিটি পদচিহ্নে ফুটে ওঠত মানুষের মুক্তির জন্য দায়বদ্ধতার চিহ্ন। প্রতিটি নিঃশ্বাসে ছিল মানবতার প্রতি অমলিন শ্রদ্ধা। প্রতিটি কাজেই প্রকাশ পেত ন্যায়ের প্রতি অটল দৃঢ়তা এবং সত্যের প্রতি অবিচল বিশ্বাস।

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা আমাদের শিখিয়েছিলেন-নম্রতার আড়ালে থাকা শক্তি, ধৈর্যের ভেতর থাকা অদম্য সাহস, এবং আদর্শের প্রতি অটলতা কেবল একটি ব্যক্তির জীবন নয়, বরং একটি জাতির মুক্তির দিশারী হতে পারে।
তাঁর আদর্শ আজও পাহাড়ের বাতাসে, নদীর স্রোতে, মানুষের হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হয়-যা আমাদের উদ্বুদ্ধ করে চলতে, লড়তে এবং বিশ্বাস রাখতে, যে একদিন ন্যায় ও স্বাধীনতার আলোকবর্তিকা পৃথিবীর প্রতিটি নিপীড়িত মানুষের জীবনে উজ্জ্বল হবে।

শহীদত্ব ও উত্তরাধিকার :

১০ নভেম্বর ১৯৮৩! সে দিন শুধু একজন মানুষ নিহত হননি, বরং পাহাড়ের বুক চিরে ছিঁড়ে নেওয়া হলো এক জাতির আর্তনাদ।মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সেদিন মর্মান্তিকভাবে শহীদ হলেন। তাঁর বুক থেকে ঝরে পড়া রক্ত পাহাড়ের প্রতিটি কণার সঙ্গে মিশে গিয়ে হয়ে উঠল পাহাড়ি মানুষের ইতিহাসের স্থায়ী স্বাক্ষর।

কিন্তু প্রশ্ন জাগে-কেন? কেন এভাবে তাঁকে হত্যা করতে হলো?

এ ছিল এক সুবিধাবাদী চক্রের নোংরা ষড়যন্ত্র। দেশি-বিদেশি গুপ্ত ঘাতকদের অপকৌশল, অন্ধ হঠকারী রাজনীতির চক্রান্ত আর এক মুষ্টিমেয় স্বার্থান্বেষী মানুষের স্বার্থ রক্ষার নোংরা খেলায় বলি হতে হলো এম.এন. লারমাকে।

তাঁকে হত্যা করে শুধু একজন নেতাকে সরানো হয়নি, বরং রুদ্ধ করা হলো জুম্ম জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের কণ্ঠস্বর। চেষ্টা করা হলো তাদের আত্মপরিচয়, তাদের অস্তিত্ব, তাদের সংগ্রামকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা ভুলে গিয়েছিল- রক্ত কখনো মিথ্যে হয় না। রক্ত যখন মাটিতে ঝরে, তখন তা ফুল হয়ে ফোটে, বজ্র হয়ে গর্জে ওঠে, মশাল হয়ে আলো ছড়ায়। এম.এন. লারমার রক্ত থেকে জন্ম নিয়েছে নতুন প্রতিজ্ঞা, নতুন শপথ।

আজও পাহাড়ের প্রতিটি আন্দোলনে, প্রতিটি প্রতিবাদে, প্রতিটি সংগ্রামে তাঁর কণ্ঠ প্রতিধ্বনিত হয়- “আমরা বাঙালি নই, আমরা পাহাড়ি, আমরা জুম্ম।” তাঁর শহীদত্ব তাই কোনো সমাপ্তি নয়- বরং এক অবিনাশী উত্তরাধিকার। এক উত্তরাধিকার, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জুম্ম জাতির আত্মমর্যাদা, অধিকার এবং স্বাধীন সত্তার সংগ্রামকে অমর করে রেখেছে। লারমা নেই, কিন্তু তাঁর আদর্শ আজও পাহাড়িদের রক্তে প্রবাহিত, শিরায় শিরায় উপ-শিরায় গর্জে ওঠা অগ্নিশিখার মতো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাঁর রক্তের ঋণ আদিবাসী পাহাড়িরা শোধ করবে- ন্যায়, অধিকার আর পৃথিবীর সকল নিপীড়িত মানুষের মুক্তির লড়াই জিতে।

শেষকথা, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা শুধু পাহাড়ি জনগণের নেতা নন। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক জীবন্ত কিংবদন্তি। তিনি প্রতিরোধের প্রতীক, তিনি আত্মপরিচয়ের প্রতীক, তিনি ন্যায়ের প্রতীক। তিনি প্রমাণ করেছিলেন- একজন মানুষও ইতিহাস বদলে দিতে পারে, যদি তাঁর ভেতরে সত্যিকারের বিশ্বাস, আগুনের মতো সাহস আর অটল আদর্শ থাকে।

আজ তাঁর জন্মবার্ষিকীতে আমরা বলি- মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা আপনার রক্তে লেখা ইতিহাস কখনো মুছে যাবে না। আপনি ছিলেন, আছেন, এবং থাকবেন-অগ্নিশিখার মতো পৃথিবীর সকল নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের সংগ্রামের পথপ্রদর্শক হয়ে।

 

বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা

 

বি:দ্র:  লেখকের অনুমতিক্রমে তার নিজস্ব ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত।

 

ভবেশ চাকমা

লেখক ও গবেষক,

ভাইস চেয়ারম্যান,
বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট।

স্মরণ ও শ্রদ্ধা  কাপ্তাইয়ে মহান বিজয় দিবসের বর্ণাঢ্য কর্মসূচী

পার্বত্য চট্টগ্রামের এক কিংবদন্তির নাম মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা

 

রিপন মারমা, কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি) প্রতিনিধি:

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮ টায়  কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কর্ণফুলী মিনি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য মার্চপাস্ট, শিশু কিশোর সমাবেশ, কুচকাওয়াজ, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান।

এসময় পুলিশ, আনসার,নৌ স্কাউটস্, রোভার ও গার্লস গাইড সহ উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা এই কুচকাওয়াজে অংশ নেন। কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী  কর্মকর্তা মো: রুহুল আমিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং সালাম গ্রহণ করেন।

এসময় কাপ্তাই সহকারী কমিশনার (ভূমি) নেলী রুদ্র থানার ওসি শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেলসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক এবং সর্বস্তরের জনগন উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে এদিন সকালে কাপ্তাই উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া সংগঠনের পক্ষ হতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এর মাধ্যমে জাতির সূর্য সন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছে রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ

পার্বত্য চট্টগ্রামের এক কিংবদন্তির নাম মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা

 

এম এস শ্রাবণ মাহমুদ : 

১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাঙ্গামাটিতে জাতির শ্রেষ্ঠ সূর্য সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন জেলা পুলিশ। মঙ্গলবার (১৬ই ডিসেম্বর)২৫ খ্রিঃ সকালে রাঙ্গামাটি রির্জাভ বাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ জেলার একাধিক স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও স্যালুট প্রদানের মাধ্যমে এই শ্রদ্ধা জানানো হয়। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, (পিপিএম) এর নেতৃত্বে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, শহিদ মিনার সংলগ্ন স্মৃতিসৌধ, শহীদ এম. এ. আলী স্মৃতিস্তম্ভ সহ শহীদ এম. শুক্কুর স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

এর আগে বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় জেলা পুলিশের একটি চৌকস দলের তোপধ্বনির মাধ্যমে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ ইকবাল হোছাইন, (পিপিএম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোঃ জসীম উদ্দীন চৌধুরী, (পিপিএম)অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ তারেক সেকান্দার, সহকারী পুলিশ সুপার (এসএএফ) মোজাম্মেল হকসহ জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক প্রহরার ব্যবস্থা, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নজরদারি করা হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রত্যয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর পর্যবেক্ষণে রয়েছে।

রামগড়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস ২০২৫ পালিত

পার্বত্য চট্টগ্রামের এক কিংবদন্তির নাম মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা

 

সাইফুল ইসলাম, রামগড়ঃ

নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস ২০২৫ পালিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শহীদ মিনারে ৩১ বার তোপধ্বনীর মাধ্যমে দিবসটির শুভ সূচনা করা হয়। এরপর শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার (স্মৃতিস্তম্ভে) পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক কাজী মোহাম্মদ শামীমের নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসন।

এরপর পর্যায়ক্রমে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, রামগড় পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, রামগড় থানা, উপজেলা ও পৌর বিএনপি, রামগড় প্রেস ক্লাব, যুবদল, মহিলা দল, উপজেলা জিয়া পরিষদ, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, পাহাড়িয়া সোসাইটি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এছাড়াও স্থানীয় সর্বস্তরের জনগণ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ শামীম, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, পৌর বিএনপির সভাপতি মো. বাহার উদ্দিন, রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজির আলমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

×